মিনতি হেমব্রম। নিজস্ব চিত্র
কেঁচো সার তৈরি করছেন। নিজেরাই যৌথ ভাবে ‘লিজ়’ নিয়েছেন পুকুর। চাষ হচ্ছে সেখানেই। রুই-কাতলা-বাটা।
অনেকে আবার নিজেদের হাতে গড়া স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে ঋণ নিয়ে সেলাই মেশিন কিনে বাড়িতেই খুলেছেন দর্জির দোকান। কেউ বাড়িতে খুলেছেন পোলট্রি বা গোটারি (ছাগল প্রতিপালন কেন্দ্র)। উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির আলতাপুর, বাজারগাঁও, খুরকা, বালিয়া এলাকার মহিলারা এখন এ ভাবেই স্বাবলম্বী। তাঁরা জানাচ্ছেন, স্বামীর রোজগারে সংসার চালাতে হিমসিম অবস্থা উজিয়ে অন্তত এক মুঠো সচ্ছলতা ফিরেছে বাড়িতে।
আর এ সবের পিছনে রয়েছেন এক আদিবাসী এক গৃহবধূ, খুরকার বাসিন্দা মিনতি হেমব্রম। ঘরে অভাব। সে অভাবকে অতিক্রম করতে এবং নিজেকে স্বনির্ভর করতে পুকুর লিজ় নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। হেঁশেল সামলে নিজের পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই সন্তানের মা মিনতি বর্তমানে কলেজে পড়ছেন। মিনতি জানান, বিয়ের পরে, ঘরে অভাব। চাষ বাস থেকে শুরু করে মাছ চাষ—সবই নিজের হাতে সামলেছেন।
সে সময়ে গ্রামের বিবাহিত মহিলারা মিনতির কাছে এসে নানা সংসারিক অসুবিধার কথা শোনাতেন। মিনতির বুঝতে অসুবিধা হয়নি, সংসারের যাবতীয় অশান্তির মূলে আর্থিক অনটন। মেয়েরা আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হলে সমস্যা যে অনেকটাই কমে যাবে, বুঝতে অসুবিধা হয়নি তাঁর। নিজেই বিউটিশিয়ান কোর্সে প্রশিক্ষণ নেন। পিছিয়ে থাকা মহিলাদের নিয়ে তৈরি করেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী।
১০ বছর আগে, এই উদ্যোগের শুরু কয়েক জন মহিলাকে নিয়ে। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে করণদিঘির বিভিন্ন আদিবাসী প্রধান এলাকার আনাচকানাচে। ক্রমে অনেকগুলি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করেন। সেলাই মেশিনে জামাকাপড় তৈরি, মাছ চাষ, মুরগি চাষ, ছাগল পালন, মৌমাছি পালন—এমন নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন কাজ করছে গোষ্ঠীগুলি। গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে সমিতিও। তার সভানেত্রী হিসেবে রয়েছেন মিনতি।
মিনতির কাছে জীবনের দিশা পেয়েছেন অনেকে আদিবাসী মহিলা। স্বামী অসুস্থ। সংসার চালানো, ছেলের লেখাপড়ার সামাল দেওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছিল ঊর্মিলা কিস্কুর। সে সময়ে পাশে পেয়েছিলেন মিনতিকে। সে কথা আজও ভুলতে পারেননি তিনি। বলছেন, ‘‘নতুন করে সংসারটা দাঁড় করানোর স্বপ্ন ওঁর কাছেই দেখেছিলাম। মিনতি আমাদের কাছে উমা।’’
গ্রামের মহিলারা জানান, বাড়িতে সেলাই মেশিনে কাজ করে মাসে দেড় থেকে দু’হাজার টাকা তাঁরা আয় করছেন। মাছ বিক্রি করে আয় কিছু বেশি। লাভের অঙ্কে সংসার চালানোর পাশাপাশি, তহবিলে জমাও পড়ছে টাকা।
রসাখোয়ার সুমি সরেন বাড়িতে সেলাই মেশিনে স্কুল পড়ুয়াদের জামাকাপড় সেলাইয়ের কাজ করেন। পুকুরে রুই-কাতলা-বাটা মাছের চাষও করছেন। বললেন, ‘‘নিজে আয় করতে পেরে বেশ লাগছে। সংসারে অবদান যেমন রাখতে পারছি, তেমনই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও শেখাতে পারছি। আর সবটাই সম্ভব হয়েছে মিনতির জন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy