—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাস পরিযায়ী পাখিদের জন্য প্রসিদ্ধ। প্রতি বছর এখানে পাখি দেখতে বহু পর্যটক ভিড় করেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, ভিন রাজ্যের অনেক মানুষও প্রতি বছর পক্ষিনিবাসে বেড়াতে যান। কিন্তু, গত বছর বন দফতরের পরিযায়ী গণনার রিপোর্ট অনুযায়ী, পক্ষিনিবাসে সব প্রজাতির পরিযায়ীর সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। শুধু কুলিকেই নয়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গলেও এ বছর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা অনেকটাই কমেছে বলে জানা যাচ্ছে। শুধু, জঙ্গলের পরিযায়ীরাই নয়, শীতের মরসুমে যে সমস্ত পরিযায়ী পাখি নদী, পুকুর ও জলাশয়কে কেন্দ্র করে আস্তানা গড়ত, এ বছর সেই সংখ্যাও অনেকটাই কম।
উত্তরবঙ্গের গজলডোবা, হেমতাবাদের বাহারাইল জঙ্গল, রায়গঞ্জের নেহালি বিল, শীতগ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকার জঙ্গল ও জলাশয়ের ধারে এ বছর শীতে আগের বারের মতো বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ীর দেখা মেলেনি। বন দফতরের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে কুলিক পক্ষিনিবাসে ৯৯ হাজার ৩৯৩টি পরিযায়ী পাখি এসেছিল। তার মধ্যে ওপেন বিল্ড স্টর্ক ৬৪ হাজার ৫৫, নাইট হেরন ৮ হাজার ৯৬৯, ইগ্রেট ১৯ হাজার ৮৪১ ও করমোর্যান্ট প্রজাতির পরিযায়ীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫২৮টি। কিন্ত, গত বছর পক্ষিনিবাসে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে ৭৮ হাজার ১৪১টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে ওপেন ওপেন বিল্ড স্টর্ক ৩৭ হাজার ৪৪, নাইট হেরন ১১ হাজার ৪৪৫, ইগ্রেট ১৯ হাজার ৭০৩ ও করমোর্যান্ট পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ছিল ৯৯৪৮টি।
কিন্তু, উত্তরবঙ্গ জুড়ে জঙ্গল ও জলাশয়ের ধারে কেন পরিযায়ী পাখি কমছে, তা নিয়ে পাখি বিশেষজ্ঞদের নানা মত রয়েছে। আমার ধারণা, লাগাতার পরিবেশ দূষণের জেরে উত্তরবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন জঙ্গলে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন জঙ্গলে চোরাশিকার বাড়তে থাকার কারণে ধীরে ধীরে সংখ্যা কমেছে। আর একটি উদ্বেগজনক কারণ, উত্তরবঙ্গ জুড়ে গাছ কাটা। প্রায় এক দশক ধরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে অনেক গাছ কেটে বাড়িঘর, সরকারি ভবন-সহ জনবসতি তৈরি করা হয়েছে। ফলে, গাছ কাটার জেরেও পরিযায়ী পাখিরা 'বিপদ' বুঝতে পেরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গল থেকে বিমুখ হচ্ছে। যা পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রথমত, উত্তরবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন নদী, পুকুর, বিল ও জলাশয়ে দিনে দিনে জল দূষণের ঘটনা বাড়ছে। ফলে, নদী, পুকুর, বিল ও জলাশয়ে মাছ, শ্যাওলা ও বিভিন্ন পোকামাকড়ের সংখ্যা কমছে। জলাশয়ের এ সব খেয়ে শীতের মরসুমে পরিযায়ী পাখিরা বেঁচে থাকে। ফলে, জলাশয়ে খাবারের সঙ্কটের জেরে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমছে। পরিবেশ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তা হলেই, উত্তরবঙ্গে আগের মতো পরিযায়ী পাখির দেখা মিলবে।
কুলিক পক্ষিনিবাসে বন দফতরের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিযায়ী পাখি গণনাকর্মী ও পাখি বিশেষজ্ঞ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy