বিভ্রাট: এসএনসিইউ-এর সামনে সন্তানকে দেখার অপেক্ষায় সাবিনা। নিজস্ব চিত্র
সদ্যোজাত পুত্রসন্তানের মৃত্যুর শোকে গত তিন দিন ধরে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘি থানার রসাখোয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বুড়িহান এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ সাবিনা খাতুন!
রবিবার রাতে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের তরফে সাবিনার পরিবারের লোকেদের ফোন করে জানানো হয়, জরুরি দরকার আছে, তাড়াতাড়ি আসুন। সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ পেশায় দিনমজুর আসিরুদ্দিন তাঁর স্ত্রী সাবিনা ও কাকা রাসেদ আলিকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যান। দুপুর তিনটে নাগাদ হাসপাতাল সুপার গৌতম মণ্ডল ভুল স্বীকার করে নিয়ে তাঁদের জানান, সাবিনার পুত্রসন্তান জীবিত রয়েছে। সে হাসপাতালের এসএনসিইউ ওয়ার্ডে চিকিত্সাধীন।
গত ৮ জুন রাতে এসএনসিইউর নার্সদের একাংশ ভুল করে সাবিনা ও আসিরুদ্দিনের হাতে বিহারের কাটিহার থানার ঘোড়াটিয়া এলাকার বাসিন্দা সাবানা খাতুনের মৃত পুত্রসন্তান তুলে দিয়েছিলেন। পুত্রসন্তানের জীবিত থাকার খবর শুনে সাবিনা ও আসিরুদ্দিন বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ঘোর কাটাতে এসএনসিইউতে নিয়ে গিয়ে পুত্রসন্তানটিকে দেখিয়ে আনেন।
সাবিনার বক্তব্য, ‘‘এসএনসিইউ কর্তৃপক্ষ ওই দিন সাবিনা খাতুন বলে ডাক দিয়ে আমাকে জানান, আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তার পরে দেহ একটি প্যাকেটে ভরে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’’ এই ধাক্কা তিনি এখনও সামলে উঠতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁদের জন্য তিন দিন ধরে আমরা সন্তানের শোকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম, এ বার তাঁদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, বাড়িতে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় বিহারের ঘোড়াটিয়া এলাকার বাসিন্দা সাবানা খাতুনকে গত ৬ জুন দুপুরে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকেরা। ওই দিন রাত ৯টা নাগাদ আয়া ও নার্সদের অনুপস্থিতিতেই শৌচাগারে পুত্রসন্তান প্রসব করেন তিনি। অসুস্থ হওয়ায় শিশুটিকে ওই দিনই এসএনসিইউতে ভর্তি করা হয়। সাবানার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরদিন দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রসূতিবিভাগ থেকে সিসিইউতে ভর্তি করেন। অন্য দিকে, বুড়িহান এলাকার বাসিন্দা সাবিনা গত ৮ জুন বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ স্থানীয় রসাখোয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অপরিণত পুত্রসন্তান প্রসব করেন! ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্সকদের পরামর্শে ওই দিনই সাবিনার পরিবারের লোকেরা শিশুটিকে জেলা হাসপাতালের এসএনসিইউতে ভর্তি করেন।
সাবানার ভাশুর আনসার আলমের দাবি, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসএনসিইউতে অসুস্থ সদ্যোজাতের মা ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেন না। সাবানার অসুস্থ হয়ে সিসিইউতে ভর্তি থাকার কারণে আমরা এসএনসিইউতে ঢুকতে পারিনি। আমাদের কোনও খোঁজও দেওয়া হয়নি শিশু সম্পর্কে। গত রবিবার দুপুরে নার্সদের একাংশ জানান, ৮ জুন বিকেল চারটে নাগাদ সাবানার শিশুটি মারা গিয়েছে।’’
হাসপাতাল সুপার গৌতম মণ্ডলের দাবি, সাবিনা, সাবানার নামের মিল থাকার জন্যই নার্সরা ভুল করে সাবানার মৃত সন্তান সাবিনার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy