প্রতীকী ছবি।
মেয়ে: মা, পুজোয় কী মেনু হচ্ছে?
মা: ভাবছি, ষষ্ঠীতে তোর ঠাম্মির পছন্দের রসগোল্লার কোফতা কারি, সপ্তমীতে তোর দাদার প্রিয় চিকেন ভুনা খিচুড়ি...
মেয়ে: আর?
মা: আর...অষ্টমীতে কাকাইয়ের পছন্দের লুচি, নারকেল দিয়ে ছোলার ডাল আর ফুলকপির তরকারি। রাতে বাবার পছন্দের ডাল পুরি, আলুর দম আর কাজুর সন্দেশ। নবমীতে মটন কিমা দম পোলাও...
মেয়ে: আমারটাও মনে রেখেছো মা?
মা: তোমারটা কী করে ভুলি বলো... তুমি তো আমার মা...
মেয়ে: আর তোমার পছন্দ? সেটা কবে হবে?
কড়াই থেকে হঠাৎই অদৃশ্য ধোঁয়া ওঠে। মা মুখটা ঘুরিয়ে নেন জ্বালা ধরা চোখ নিয়ে।
সেই কবে মায়ের হাতে মাখা পান্তা খেয়েছিল দশমীর সন্ধ্যায়, বিসর্জনের শেষে। আর মনে নেই। এখন জিভে শুধুই নুন আর ঝাল চেখে দেখা। বাড়ির সকলের পছন্দ, সাধ-আহ্লাদ, এ ছাড়া কি তাঁর নিজের কিছু থাকতে পারে? আসলে সংসার যে সুখের হয় রমণীর গুণে। সেই কবে শাশুড়ি বলেছিলেন, ‘বৌয়ের জিভ শুধু খাবারে নুন, ঝাল ঠিক আছে কি না দেখার জন্য। অত বেশি প্রশ্ন করার জন্য নয়।’ তার পর থেকে আর কোনও প্রতিবাদও আসে না সেই জিভে।
‘বলেছে –ধীরে/ বলেছে –কথা না,/ বলেছে –চুপ।/ বলেছে– বসে থাকো,/ বলেছে– মাথা নোয়াও,/ বলেছে — কাঁদো।’
চুপ থাকার এই প্রবাহ আবহমানের। কথিত আছে, উজ্জয়িনীর মহারাজ বিক্রমাদিত্যের সময় বারাসতের দেউলি গ্রামে জন্ম নেন খনা। জ্যোর্তিবিদ্যায় নিজের শ্বশুর এবং স্বামীকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যান তিনি। শ্বশুরের মিথ্যাচার প্রকাশ্যে আনার ‘অপরাধে’ কেটে ফেলা হয়েছিল খনার জিভ!
আর এ যুগে?
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধে লেখা ছিল, ‘লাগামছাড়া ও অনিয়ন্ত্রিত শক্তি ধ্বংস ডেকে আনে। তাই মহিলাদেরও স্বাধীনতার প্রয়োজন নেই, তাঁদের সুরক্ষা ও সঠিক পথে চালিত করার প্রয়োজন রয়েছে। শৈশবে স্ত্রীশক্তি সুরক্ষিত থাকে বাবার দ্বারা, যৌবনে স্বামীর দ্বারা ও বার্ধক্যে পুত্রের দ্বারা’। সম্প্রতি ষাঁড়, মোষ, মহিলা— যোগী আদিত্যনাথ সবাইকেই এক আসনে বসানোর পরে বৃত্তটা যেন সম্পূর্ণ হয়। বা হয়েও হয় না। বরং বৃত্তে বাহু যোগ হয়। ভিতরে, গভীরে অনেকেই এই কথাগুলি বিশ্বাস করেন। অনেকেই মনে করেন, ছোট পোশাকে বাইরে বার হলে বা রোজ রোজ বেশি রাতে ঘরে ফিরলে বা পার্টিতে মদ খেলে সেই মেয়েরা ধর্ষিত হবে, এতে ছেলেদের আর দোষ কী!
২০১২ সালে দিল্লিতে শীতের রাতে বাসে তুলে নিয়ে যে মেয়েটিকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল, তাঁর বেলাতেও এই ‘যুক্তি’ কি ফিরে ফিরে আসেনি? তার পর যখন তাঁর মা যাবতীয় প্রথা ভেঙে সবার সামনে এসে বলেছিলেন, ‘‘আমার মেয়ের নাম নিতে কেন লজ্জা পাব? লজ্জা পাওয়া উচিত দোষীদের,’’ তখনও তা মান্যতা পায়নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই মেয়েটি আজও রয়ে গিয়েছেন ‘নির্ভয়া’ নামের আড়ালে। ধর্ষণের ‘দোষ’ যে আসলে ধর্ষিতার!
মায়ের হাতে তৈরি মটন কিমা দম পোলাও খেয়ে মেয়ে পুজো দেখতে বার হয় নবমীর দিন। সঙ্গে ছেলে বন্ধুরা। শারদীয় আলো জ্বলে ওঠে। মনে হয়, মহামায়া যেন বলছেন, ‘‘মন ভরে জীবন উপভোগ করো মেয়ে। এ বার জগতের স্বাদবদল হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy