সদ্যোজাত ও আত্মীয়দের সঙ্গে রুকসানা খাতুন। নিজস্ব চিত্র
মাত্র তিন দিন আগেই অস্ত্রোপচারে জন্ম দিয়েছেন ‘ফুটফুটে’ কন্যা সন্তানের। অদম্য ইচ্ছেশক্তির জেরে বুধবারই সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিলেন রতুয়ার বাসিন্দা রুকসানা খাতুন। মালদহ মেডিক্যালের মাতৃমা বিভাগের শয্যায় বসেই পরীক্ষা দেন তিনি।
সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে রুকসানার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ায় জেলায় যে এখনও নাবালিকা বিয়ে চলছে, তা ফের প্রকাশ্যে এল। অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় হওয়ার পরেও গ্রাম-গঞ্জে চুপিসারে নাবালিকা বিয়ে হচ্ছে। গ্রামীণ স্তরে প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক অশোককুমার মোদক। তিনি বলেন, “নাবালিকার বিয়ে রুখতে আমরা অনেকটাই সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র থেকে শুরু করে শিক্ষকেরাও নাবালিকার বিয়ে রুখতে এগিয়ে আসছেন। গ্রামীণ স্তরে প্রচারে আরও জোর বাড়ানো হবে।”
রতুয়ার মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা রুকসানা খাতুন। তিনি রতুয়ার কেফাতুল্লা হাইস্কুলের ছাত্রী। তাঁর পরীক্ষার সিট পড়েছিল রতুয়ারই সুলতানগঞ্জ হাইস্কুলে। দু’বছর আগে পেশায় শ্রমিক সরবরাহকারী গ্রামেরই বাসিন্দা রবিউল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় রুকসানার। সেই সময় নবম শ্রেণিতে পড়তেন ওই তরুণী। তাঁর বাবা হাবিবর রহমান শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর পাঁচ মেয়ের মধ্যে রুকসানাই বড়। নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উঠতেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ওই তরুণী। রবিবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। পরিবারের লোকেরা প্রথমে তাঁকে নিয়ে যান রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে রেফার করা হয় মালদহ মেডিক্যালে। ওই রাতেই কন্যা সন্তান জন্ম দেন রুকসানা।
হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগেই তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা করেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন ঘণ্টা শয্যায় বসেই পরীক্ষা দেন রুকসানা। এরই মাঝে সন্তানকে কোলে নেন। তিনি বলেন, “আমার খুব ইচ্ছে আরও উচ্চশিক্ষার যাতে সুযোগ পাই। তাই শারীরিক যন্ত্রণা থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা দিচ্ছি।’’ কত বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল? তিনি বলেন, “এখন আমার ১৮ বছর হয়ে গিয়েছে। তবে বিয়ের সময় বয়স কম ছিল। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তাই বাড়ির কথা মতো বিয়েতে রাজি হয়ে যাই।” তাঁর বাবা হাবিবর রহমান বলেন, “অভাবের সংসারে অল্প বয়সেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে ছিলাম। বাকি মেয়েদের আর নাবালিকা বয়সে বিয়ে দেব না।”
হাসপাতালের সুপার অমিতকুমার দাঁ বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য পৃথক পাঁচটি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক পরীক্ষার্থী সন্তান প্রসবের পরেও পরীক্ষা দিচ্ছেন। আমরা তাঁকে সব রকম সহযোগিতা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy