প্রথম পরীক্ষা: মাধ্যমিক দিয়ে বেরোচ্ছে তিন দৃষ্টিহীন ছাত্র। মঙ্গলবার কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
একদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অন্যদিকে পারিবারিক আর্থিক অনটন। তাতেও অবশ্য জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে এতটুকু খামতি রাখতে চায় না কেউ। এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে সেই লড়াইকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে চাইছে কোচবিহার টাউন হাইস্কুলের পাঁচ দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থী, বিশ্বদীপ রায়, মনোজিৎ দেবনাথ, কুলদীপ ওরাওঁ, শিবচরণ রায়, নিমাই বিশ্বাস।
প্রথম দিনের পরীক্ষা ভাল হওয়ায় খুশি সকলেই। ঘটনাচক্রে গত বছরের মাধ্যমিকেও ওই স্কুলের পাঁচ দৃষ্টিহীন পড়ুয়া মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ক্ষেত্র আলাদা হলেও মহাভারতের মতো জীবন যুদ্ধের জন্য তাদের অনেকেই ‘পঞ্চপাণ্ডব’ বলে ডাকতেন। এ বারেও তাই একই স্কুলের পাঁচ জন দৃষ্টিহীন মাধ্যমিকে বসায় নতুন পঞ্চপাণ্ডবের লড়াইয়ের কথা অনেকের মুখে ঘুরছে।
এ দিন কোচবিহার শ্রীরামকৃষ্ণ বয়েজ হাইস্কুলে ‘সিট’ পড়েছিল তাদের। ‘রাইটার’ নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে প্রত্যেকে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কোচবিহারের প্রতিনিধি মিঠুন বৈশ্য বলেন, “পাঁচ পরীক্ষার্থীর ব্যাপারেই নিয়ম মেনে পরীক্ষার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে বিশেষ ভাবে নজর রাখতে বলা হয়েছে।ওদের প্রত্যেকের চেষ্টা কুর্নিশযোগ্য।” তাঁর সংযোজন, ওই পরীক্ষার্থীরা অন্যদের কাছেও বিরাট অনুপ্রেরণা।
বিশ্বদীপের বাড়ি জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে। বাবা পুলেন্দ্র কৃষিকাজ করেন। অভাব-অনটনের সংসার। অসমের কোকরাঝাড়ের বাসিন্দা মনোজিতের বাবা জগদীশ দেবনাথও পেশায় কৃষক। নাগরাকাটার বাসিন্দা কুলদীপের বাবা সুরেশ ওরাওঁ চা বাগানের শ্রমিক। আলিপুরদুয়ারের দমনপুরের বাসিন্দা শিবচরণের বাবা মারা গিয়েছেন। এক দাদা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। টানাটানির সংসার তাদের। ময়নাগুড়ির বাসিন্দা নিমাইয়ের বাবা তাপস বিশ্বাস মোটরবাইক মেরামতির কাজ করেন। পরীক্ষার পরে প্রত্যেকেই জানিয়েছে, অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী। তার মধ্যেই তাদের লড়াই জারি রয়েছে। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তারা স্বনির্ভর হতে চায়। কেউ চাকরির স্বপ্ন দেখে, কেউ নিজেদের অন্য প্রতিভাকে কাজে লাগাতে চায়। তাই ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ফাঁকি দেয় না কেউ।
‘নতুন’ পঞ্চপাণ্ডবদের নিয়ে আশাবাদী টাউন হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সঞ্জয় ডাকুয়া। তিনি বলেন, “গত বছরের মতো এ বারেও আমাদের স্কুলের পাঁচ জন দৃষ্টিহীন পড়ুয়া মাধ্যমিক দিচ্ছে। ওদের প্রত্যেকের মধ্যে দারুণ মিলও রয়েছে। প্রত্যেকেই ভীষণ মনোযোগী। আমরা ওদের সাফল্য নিয়ে আশাবাদী।”
যে স্কুলে ওই পাঁচ জনের ‘সিট’ পড়েছিল, সেই শ্রীরামকৃষ্ণ বয়েজ হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু আইচ বলেন, “পর্ষদের নিয়ম মেনে ওই পাঁচ জনকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। রাইটার নিয়েই সবাই পরীক্ষা দিয়েছে। অতিরিক্ত রাইটারের ব্যবস্থাও ছিল।” পরীক্ষা শেষে ওই পাঁচ জনকে একসঙ্গে দেখে কয়েকজন অভিভাবক তো বলেই ফেললেন, ‘‘পঞ্চপাণ্ডবের মতো তোমরাও জয়ী হও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy