Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মাজিদের খুনিদের শাস্তি চেয়েই ভোট দেবে পরিবার

ভোটের আঁচ কেমন ভাবে পড়ছে প্রত্যন্ত এলাকায়? কেমন আছেন দুঃস্থ, একদা নির্যাতিত, বা প্রান্তিক ভোটাররা? জনজীবনের সেই ছবি তুলে ধরছে আনন্দবাজার।বাবা মুস্তাকিন আনসারি বুকে পাথর চাপিয়ে বসে রয়েছেন। ছেলের কথা উঠতেই শরীর শক্ত হয়ে যায় তাঁর।

কোচবিহারে বাড়িতে মাজিদের বাবা, ভাই ও মা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

কোচবিহারে বাড়িতে মাজিদের বাবা, ভাই ও মা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

নমিতেশ ঘোষ 
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৪৫
Share: Save:

চোখের জল এখনও শুকোয়নি। বার বার মায়ের চোখ চলে যায় বাইরের দিকে, এই বুঝি এল মাজিদ। সালেয়া বেগম বলেন, “আমার চোখের পানি এখনও শুকোয়নি। মাঝে মাঝেই মনে হয়, মা মা করে ডেকে ছেলেটা ঘরে ঢুকছে। আমি বলছি, আর রাজনীতির মধ্যে যাস না বাবা।”

বাবা মুস্তাকিন আনসারি বুকে পাথর চাপিয়ে বসে রয়েছেন। ছেলের কথা উঠতেই শরীর শক্ত হয়ে যায় তাঁর। তিনি বলেন, “এক নিমেষেই কত কিছু ঘটে গেল। এখন তো আর সেই পরিবেশ নেই। তাহলে কেন সেদিন আমার ছেলেটাকে গুলি করে মারা হল?” আর সাজিদ, মাজিদের দাদা। প্রায় একই বয়সী দু’জন। দুই ভাই যেন এক আত্মা ছিল। সাজিদের কথায়, “ভাই চলে যাওয়ার পর সময়ই কাটতে চায় না।” কথা জড়িয়ে আসে তাঁর। চোখের কোনায় চিকচিক করে জল।

চৈত্রের ভরা দুপুর। ধূলো উড়ছে রাস্তা দিয়ে। চারদিক থেকে একটা স্লোগান ভেসে আসছে, ‘ভোট ভোট, ভোট দিন’। রাস্তার ধারে পতপত করে উড়ছে পতাকা। কোথাও ঘাসফুল, কোথাও পদ্ম। কোথাও আবার বাঘ, রয়েছে হাতও। সন্ধে হলেই মিছিল বের হয়। কখনও কখনও মাইকের আওয়াজ ভেসে। কোচবিহার শহরের রেলঘুমটি লাগোয়া গলির ভেতরে মাজিদদের বাড়ি থেকে সব শোনা যায়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শোনা গিয়েছিল সেদিনও। একটা গুলির শব্দ। না, শব্দ শোনা যায়নি, সেই শব্দের তরঙ্গের ঢেউ এসে পড়েছিল বাড়িতে। তার পর মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ। প্রায় দু’সপ্তাহ লড়ে হেরে গিয়েছিলেন মাজিদ। গুলি দেহ ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল তাঁর। কফিনে বাড়িতে এসেছিল মাজিদের দেহ।

সালেয়া বলেন, “কত বয়স হয়েছিল ওঁর, ২২। কলেজে একটি বছর শুধু পড়েছে। ওর কি মৃত্যুর বয়স হয়েছিল?” কারও কাছে কোনও উত্তর নেই। বিড় বিড় করে নিজেই বলেন, “আসলে মৃত্যুর বোধহয় বয়স হয় না।”

ওই দিন, গত বছরের ২৫ জুলাই ভিড় জমেছিল মাজিদদের বাড়ির সামনে। মাজিদের দেহ নিয়ে মিছিল বেরিয়েছিল শহরে। ‘শাস্তি চাই শাস্তি চাই’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল আকাশ-বাতাস। কোচবিহার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন মাজিদ। ওই কলেজেরই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট আহ্বায়ক ছিল সে। কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্টেশন মোড় লাগোয়া এলাকায় রাস্তায় আটকে গুলি করা হয় মাজিদকে। টিএমসিপিরই একটি গোষ্ঠীর সদস্যরা মাজিদকে গুলি করে বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশ অভিযুক্ত সাতজনকেই গ্রেফতার করেছে। তারা এখন জেলে আছে।

২৫ জুলাই রাত ১০টা নাগাদ মৃত্যু হয় মাজিদের। সেই থেকে প্রাণবন্ত বাড়িটা যেন নিস্তেজ। তবে ভোট দেবেন মাজিদের পরিজনেরা সবাই। তাঁরা বলেন, “ভোট সবাই দেব। আমরা চাই দোষীরা জেল থেকে বেরোতে না পারে। আর কোনও মা-বাবার সন্তান যেন কেড়ে নিতে না পারে।”

অন্য বিষয়গুলি:

LOk Sabha Election 2019 Death Majid Ansari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE