ফাইল চিত্র
কারও নামে কুমার বাদ পড়েছে, কারও বাবার নামের বানান ভুল। কারও আবার ঠিকানা অন্য ছাপা হয়েছে। সকলেই মানছেন এগুলি ‘সামান্য’ ভুল। এবং সকলেই দাবি করছেন, এই ‘সামান্য’ ভুলই সংশোধন করা এখন অত্যন্ত ‘জরুরি।’ এনআরসি-র ভয় খাঁড়ার মতো মাথার ওপরে ঝুলছে বলে মানলেন জলপাইগুড়ির পোস্ট অফিসে লাইন দাঁড়ানো সকলেই। শহর লাগোয়া বাহাদুর এলাকা থেকে এসেছেন জমিরুদ্দিন। তিনি থাকেন বেনিয়াপাড়ায়। ঠিকানা ছাপা হয়েছে বানিয়াপাড়া। বানিয়াপাড়া নামে একটি জায়গা পাশের গ্রামেও আছে। বুধবার দুপুরে জমিরুদ্দিন বললেন, “অনেক দিন আগে থেকেই ভুল ছিল। কিন্তু এখন তো এই ভুল আর রাখা যাবে না। আমাদের নাগরিত্বের নথি বলতে ঠাকুরদার জমির কাগজ। সেখানে বেনিয়াপাড়ার জমি উল্লেখ আছে। আমার আধার কার্ডে বানিয়াপাড়া লেখা আছে। কী জানি এই পাড়ার ভুলে যদি আমার ঠাকুরদাকে নিজের বলে প্রমাণ করতে না পারি!”
জলপাইগুড়িতে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায়, ডাকঘরে এবং বিএসএনএল অফিসে নতুন আধার কার্ড তৈরি এবং সংশোধন হয়। রোজই ভিড় উপচে পড়ে সব কেন্দ্রে। ভোর রাত তো বটেই, কখনও গভীর রাত থেকেও লাইন শুরু হয়। ভিড় এড়াতে অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বড় ডাকঘর। শুধুমাত্র সোমবার করে ফর্ম দেওয়া হয়। তার পর সারা সপ্তাহ ফর্মের ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী সংশোধনের কাজ হয়। মুখ্য ডাকঘরে বসা এক কর্মীর কথায়, “নতুন আধার কার্ড তৈরি প্রায় নেই-ই। সকলেই আসছেন আধার কার্ডে সংশোধন করাতে। এনআরসি হতে পারে ধরে নিয়েই সকলে লাইন দিচ্ছেন।”
লাইনেই ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ত্রিদিব মণ্ডল। আধার কার্ডে তাঁর বাবার নাম সুরেনের বদলে ছিল সুরীন। এত দিন খুব একটা ভাবেননি ত্রিদিববাবু। ভোর ৬টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও জলপাইগুড়ির দিনবাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে দুপুরে খালি হাতে ফেরার সময়ে তিনি বলেন, “এনআরসি তৈরি হলে দুই নামের গেরোয়া অনেক জবাবদিহি করতে হবে। তাই শুধরে নিচ্ছি।”
জলপাইগুড়ি জেলা সদরে রোজ এমন সংশোধনের অন্তত সাড়ে পাঁচশো আবেদন জমা পড়ছে। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি কৃষ্ণ কুমার কল্যাণীর কথায়, “বিজেপি এনআরসি-র ভয় দেখিয়ে মানুষকে আধার কার্ডের লাইনে দাঁড় করাচ্ছে। এই পাপের ফল আগামী ভোটে তাদের ভোগ করতে হবে।’’
আফরিনি বেগম কোলের শিশুকে বাড়িতে রেখে সকাল সাতটায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর নিজের নামের বানানই ভুল রয়েছে। পাশের বাড়ি থেকে ঘনঘন ফোন আসছে। স্বামী দিনমজুরি করেন। বাড়িতে কেউ না থাকায় শিশুটাকে পাশের বাড়ি রেখে এসেছেন। চেহারায় একরাশ উদ্বেগ নিয়ে আফরিন বললেন, “এই নিয়ে পাঁচবার ফোন হয়ে গেল। বাচ্চাটা নাকি খুব কাঁদছে। কাঁদুক, কিছু করার নেই। দেশ থেকে তাড়িয়ে দিলে আরও কান্না কপালে থাকবে যে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy