—প্রতীকী চিত্র।
নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্তেও কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার শাসক দলের ‘মাথা’দের বাঁচানোর চেষ্টা করছে বলে সরব হল সিপিএম। তাদের অভিযোগ, নিয়োগ-দুর্নীতির চার্জ গঠন শুরু হয়েছে ইডি-র দেওয়া যে মূল চার্জশিটের ভিত্তিতে, সেখানে ‘লিপস্ অ্যান্ড বাউন্ড্স’ সংস্থার নাম থাকলেও সেই সংস্থার কর্তাদের নাম নেই। ওই সংস্থার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের লোকজনের নাম জড়িত বলেই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এই ভাবে নাম এড়িয়ে গিয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। একই সুরে ‘সেটিং’-র অভিযোগ করেছে কংগ্রেসও। তৃণমূল অবশ্য বলছে, এটা তদন্তকারী সংস্থার বিষয়। এর সঙ্গে ‘সেটিং’-এর তত্ত্ব টানা অর্থহীন।
রাজ্যে নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্তে এখন চার্জ গঠন শুরু হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ তুলেই বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘চার্জ গঠন শুরু হল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় আছে, মানিক ভট্টাচার্য আছে, আরও নাম আছে। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক নেই! কেন? ‘লিপস্ অ্যান্ড বাউন্ড্স’-এর সঙ্গে তাঁর যোগ তো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন। নিয়োগ-দুর্নীতির টাকা ঢুকেছে যে সংস্থায়, তার অধিকর্তা, সিইও-র নাম থাকবে না? সংলগ্ন অন্য নথিতে কোথায় কী রেখে দিয়েছে, সেটা তো পরের কথা।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘দিনের আলোর মতো সবাই সব বুঝতে পারছে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কাকু গ্রেফতার হলেন। তিনি বললেন, তাঁর সাহেবকে কেউ ছুঁতে পারবে না। দিল্লি তা-ই করল? গ্রেফতার হওয়ার পরে সুজয়কৃষ্ণের গলার স্বর বন্ধ হয়ে গেল! দেড় বছর ধরে স্বর নেই। সেটিং করে তৃণমূলের নেতাদের বাঁচানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।’’
সুজন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘লিপস্ অ্যান্ড বাউন্ড্স’-এর কথা প্রথম প্রকাশ্যে এনেছিলেন সিপিএম নেতা গৌতম দেব। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ঠিকানায় ওই সংস্থার দফতর দেখানো ছিল। অভিষেকের বাবা-মা, স্ত্রীর নাম ছিল সংস্থার পদাধিকারী হিসেবে। সুজনের অভিযোগ, ‘‘নানা রকম ভাবে গোপন করার চেষ্টা হয়েছে। একটা সংস্থা মানে তো চেয়ার-টেবিল নয়! তার কর্তাদের নাম মূল চার্জশিটে থাকবে না? কে কেন আটকাল?’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়েরও দাবি, ‘‘দিল্লির বিজেপি এবং বাংলার তৃণমূলের গাঁটছড়া পরিষ্কার। এত বড় নিয়োগ-দুর্নীতি, শিক্ষামন্ত্রী এবং আমলারা জেলে। সেই দুর্নীচির টাকার সঙ্গে যে সংস্থা জড়িত, তার কর্তাদের নাম মূল চার্জশিটে থাকবে না? যুবরাজ ও পরিবারের নাম বেরিয়ে পড়বে বলে?’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘মাথাদের খুঁজে বার করতেই হবে।’’
বিরোধীদের তোপের জবাবে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেছেন, ‘‘এটা তদন্তের বিষয়। তদন্তকারী সংস্থা কার নাম দেবে, কার দেবে না, তা তারাই ঠিক করবে। না কি সিপিএমের কাছে জিজ্ঞেস করে করবে?’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘যে তৃণমূলই বিজেপিকে হারিয়ে চলেছে, তার সঙ্গে ‘সেটিং’ হয়? নিজেদের ভোট বিজেপিকে দিয়ে হাস্যকর যুক্তিতে দায় সারছেন ওঁরা!’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আদালতের নজরদারিতে গোটা প্রক্রিয়া চলছে। কেউ প্রশ্ন তুলতে চাইলে উপযুক্ত জায়গায় গিয়ে তুলতে হবে। আদালতের উপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’’
এরই পাশাপাশি ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে সাংসদ অভিষেকের ‘সেবাশ্রয়’ শিবিরের ব্যবস্থাপনা ও খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম-কংগ্রেস। সুজনের প্রশ্ন, ‘‘ডায়মন্ড হারবারে লুটের ‘মডেল’ চলেছে। এ বার ‘সেবাশ্রয়’। সেখানে ৭ দিনে এক লক্ষ রোগী এসেছেন বলা হচ্ছে। এই মানুষগুলো কি বসে ছিলেন কবে এক জন ‘সেবাশ্রয়’ করবেন, তবে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে? এত ডাক্তার, এত এলাহি আয়োজন, তার খরচ কে দিচ্ছে? কোথা থেকে আসছে? এখানেও কি দুর্নীতির টাকা ঢুকে আছে?’’ কংগ্রেসের সৌম্যের দাবি, ‘‘সরকারি ব্যবস্থা ও খরচে পরিষেবা দিতে হলে সব কেন্দ্রের সাংসদই সেটা করতে পারেন। এই ‘মডেলে’র টাকার উৎসটা কী, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ নিশ্চয়ই জানাবেন!’’ তৃণমূলের কুণালের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘এই জন্যই এরা কিছুতেই জনবিচ্ছিন্নতা কাটাতে পারছে না! এত বড় একটা কাজের কার্যকারিতা না দেখে অর্থের খোঁজে কুৎসা করতে চাইছে। মানুষ চাইলে সাংসদ হিসেব দেবেন। সিপিএম বা কংগ্রেসকে কেন দিতে যাবেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy