Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পরিচারিকার মেয়েকে মার, অভিযুক্ত আইনজীবী

পরিচারিকার পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে মারধর করার অভিযোগে রায়গঞ্জ জেলা আদালতের এক প্রাক্তন সরকারি আইনজীবীকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন প্রতিবেশীদের একাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

পরিচারিকার পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে মারধর করার অভিযোগে রায়গঞ্জ জেলা আদালতের এক প্রাক্তন সরকারি আইনজীবীকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন প্রতিবেশীদের একাংশ। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জের তুলসীতলা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই আইনজীবীর নাম দেবাশিস বসু।

এ দিন দেবাশিসবাবুর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে বেধড়ক মারধর শুরু করে তাঁর একদল প্রতিবেশী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দেবাশিসবাবুকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তারা। গভীর রাত পর্যন্ত দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের না হলেও তাঁর নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁকে থানা থেকে জামিনে ছাড়েনি পুলিশ। শনিবার সকালে দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে সন্দেহজনক কাজকর্মের অভিযোগে জামিনযোগ্য সিআরপিসির ৪১ (এ) ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। এরপর তাঁকে রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক সংগ্রাম সাহা ৫০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে দেবাশিসবাবুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনার পর তাঁকে সরকারি আইনজীবীর পদ থেকে সরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার।

স্ত্রীকে খুনের মামলায় জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর দেবাশিসবাবুর বাড়িতেই ওই পরিচারিকা থাকতেন। তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ের পড়াশোনা করাতেন দেবাশিসবাবু। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, ওইদিন দেবাশিসবাবু ওই শিশুটিকে বাড়ির সামনের বাগানের মধ্যে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। তাই দেবাশিসবাবুকে পাল্টা মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ ওই শিশুটিকে ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে শিশু কল্যাণ সমিতির হাতে তুলে দেয়। সমিতির তরফে এরপর শিশুটিকে দেবীনগরের একটি হোমে পাঠায়। ওই শিশুটির মা এ দিনই মুচলেকা দিয়ে তাঁর মেয়েকে নিজের হেফাজতে নিয়েছেন। এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

রায়গঞ্জ জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী দীপ্তেশ ঘোষ বলেন, ‘‘দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ায় আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করে।’’ অন্যদিকে, দেবাশিসবাবুর জামিন হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে তাঁর প্রতিবেশীদের একাংশের মধ্যে। তাঁদের দাবি, অভিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে কেউ পুলিশে অভিযোগ জানানোর সাহস পাননি। সেই সুযোগে পুলিশ তাঁকে বাঁচাতে লঘু ধারায় মামলা করে জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করেছে। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরের দাবি, পুলিশ আইন মেনেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

জেলা পুলিশের এক কর্তার অবশ্য যুক্তি, শিশুদের মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের না করলে পুলিশের পক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক কাজকর্মের অভিযোগে জামিনযোগ্য সিআরপিসির ৪১(এ) ধারায় মামলা করা ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। দেবাশিসবাবুর ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে।

দেবাশিসবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, ওইদিন শিশুটি পড়াশোনা না করায় তাঁকে সামান্য বকাবকি করেছিলেন তিনি। প্রতিবেশীদের একাংশ ষড়যন্ত্র করে তাঁর উপর চড়াও হন। তিনি আইনের পথে যাবেন।

৪ ফেব্রুয়ারি দেবাশিসবাবুর তুলসীতলা এলাকার বাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর স্ত্রী রেণুকা বসুর (৪৩)। বাড়ির পিছনের ঝোপ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশ বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে মামলা দায়ের করে তাঁকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলাও দায়ের হয়। কয়েক মাস জেল হেফাজতে থাকার পর তিনি জামিনে ছাড়া পান। ওই ঘটনার পর থেকেই প্রতিবেশীদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Lawyer Accused house maid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE