Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সেতুর অভাব, বন্দিত্ব কাটাতে চায় চাঁচল

এক দিকে মহানন্দা নদী। অন্য দিকে সুই। বর্ষার ভরা নদীতে ভরসা নৌকো। আর অন্য সময় বাঁশের মাচা। বাসিন্দারা নিজেদের বলেন ‘দ্বীপবাসী’। সেতু তৈরি করে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এলাকাগুলিকে জুড়ে দেওয়ার দাবিতে গত তিন দশক ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা।

সেতুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন বাসিন্দারা। — নিজস্ব চিত্র

সেতুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন বাসিন্দারা। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪২
Share: Save:

এক দিকে মহানন্দা নদী। অন্য দিকে সুই। বর্ষার ভরা নদীতে ভরসা নৌকো। আর অন্য সময় বাঁশের মাচা। বাসিন্দারা নিজেদের বলেন ‘দ্বীপবাসী’। সেতু তৈরি করে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এলাকাগুলিকে জুড়ে দেওয়ার দাবিতে গত তিন দশক ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু স্বাধীনতার ৭০ বছর হতে চললেও নদী থেকে বন্দিদশা ঘুচল না মালদহের চাঁচলের তিনটি এলাকার ১২ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাদের।

চাঁচল-২ ব্লকের চন্দ্রপাড়া পঞ্চায়েতের ওই তিন এলাকা হল হোসেনপুর, ইগাছি ও মাধাইহাট। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী থাকার সময় বাসিন্দাদের দাবি মেনে সেতু তৈরির জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এলাকাগুলিকে পঞ্চায়েত এলাকার সঙ্গে জুড়তে গোয়ালপাড়া ঘাটে সেতু তৈরির জন্য মাপজোক হয়েছিল। জেলা পরিষদের তরফে দ্রুত সেতুর আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রিয়রঞ্জনবাবু অসুস্থ হওয়ার পর প্রশাসনের পাশাপাশি কেউই ওই সেতু গড়া নিয়ে উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ। ফলে আজও বিপজ্জনক ভাবে দুই নদী পেরিয়ে পঞ্চায়েত, ব্লক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের সঙ্গে পড়ুয়াদেরও। যদিও সেতুর প্রস্তাব পাঠানো হলেও বরাদ্দ না মেলায় কাজ করা যাচ্ছে না বলে জেলা পরিষদ সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

বাসিন্দাদের দাবির কথা অজানা নয় উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম বেনজির নুরেরও। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে সেতু গড়তে প্রচুর টাকা দরকার। জেলা পরিষদ প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সেতুর জন্য বিধানসভায় সরব হবেন বলে জানিয়েছেন মালতীপুরের বিধায়ক আলবেরুনি জুলকারনাইনও।’’

চাঁচল থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। ওই পঞ্চায়েতেরই হোসেনপুর ও তেলাইগাছি এলাকা দু’টির এক দিকে মহানন্দা ও অন্য দিকে সুই। সুই নদীর ওপারে আবার মাধাইহাট এলাকা। দুই নদী এড়িয়ে মাধাইহাট এলাকার বাসিন্দাদের পঞ্চায়েতে পৌঁছতে হয় ৩৫ কিলোমিটার ঘুরপথে। মাধাইহাটের তবু উত্তর দিনাজপুরের জয়হাট হয়ে ঘুরপথে সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু হোসেনপুর আর তেলাইগাছি এলাকা দু’টি একেবারেই বিচ্ছিন্ন। ফলে সেতু হলে শুধু পঞ্চায়েত এলাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে তাই নয়। এপারের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষও সহজেই উত্তর ও দক্ষিণ দুই দিনাজপুরেই যেতে পারবেন।

হোসেনপুর এলাকার আজিজুর রহমান, তেলাইগাছির মেহফুজ আলমরা বলেন, ‘‘কেউ অসুস্থ হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে ভরসা খাটিয়া। পঞ্চায়েতে পৌঁছতেও নাভিশ্বাস ওঠে। এলাকায় হাই স্কুল নেই। বর্ষায় পড়ুয়াদের স্কুলে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আমরা এ দেশের বাসিন্দা কি না তা নিয়েই মাঝেমধ্যে সংশয় তৈরি হয়।’’

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধক্ষ হামেদুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওখানে সেতুর জন্য এমএসডিপি (মাল্টি সেক্টারাল ডেভলপমেন্ট প্রোজেক্ট) প্রকল্পে বরাদ্দ চেয়ে আমরা তা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলেই কাজ হবে।’’

চাঁচলের মহকুমাশসাক পুষ্পক রায় বলেন, ‘‘ওখানে সেতু হলে তো খুব ভাল হয়। জেলা পরিষদ প্রকল্প পাঠিয়েছে বলছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

bridge distress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE