মহম্মদ আসিফ। নিজস্ব চিত্র।
কালিয়াচক-কাণ্ডে ধৃত মহম্মদ আসিফ নিজেই যেন মূর্তিমান রহস্য! বছর উনিশের ওই তরুণ সম্পর্কে পুলিশ যত জানতে পারছে ততই যেন জড়িয়ে যাচ্ছে একের পর এক রহস্যের জাল।
কালিয়াচকের আনন্দ রাজনগর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছিল আসিফ। বর্তমানে একটি বেসরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণির ছাত্র সে। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই আসিফের কম্পিউটার নিয়ে নাড়াচাড়া করার অভ্যাস ছিল বলে প্রতিবেশীদের বক্তব্য। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, অল্প বয়সেই কম্পিউটারে দারুণ দক্ষতা অর্জন করেছিল সে। আসিফের এক প্রতিবেশী বলছেন, ‘‘মাস চারেক ধরে আসিফের পরিবারের কাউকে দেখতে পাওয়া যেত না। গ্রামে সকলের জানতেন, ওঁরা অন্য কোথাও চলে গিয়েছেন। পাড়ার লোক তো গতকাল জানতে পারলেন এ সব। ছেলেটাকে এর আগে সাইবার অপরাধের অভিযোগে পুলিশ ধরেছিল। ও ঘরেই থাকত। গ্রামে কারও সঙ্গে মিশত না। এমনকি অনলাইনে খাবার এনে খেত।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে গত ১০ মার্চ সাইবার ক্রাইম বিভাগ আসিফের কম্পিউটার, মোবাইল এবং ল্যাপটপ পরীক্ষা করে। তারা বুঝতে পারে, আসিফ হ্যাকিংয়ে অত্যন্ত দক্ষ। তাতেই প্রথম সন্দেহ হয় পুলিশের। তবে তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকায় তখনকার মতো ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আসিফ কোথা থেকে হ্যাকিং সম্পর্কে এত কিছু শিখল, কোথা থেকে প্রশিক্ষণ পেল— এ সব প্রশ্ন ভাবাতে থাকে পুলিশকে। আসিফের এক আত্মীয় বলছেন, ‘‘ওর হাবভাব মনোরোগীদের মতো হয়ে গিয়েছিল। ও মাধ্যমিকের পর থেকেই কোডিং নিয়েই মেতেছিল। অ্যাপ তৈরির চেষ্টা করছিল। বাবা ভেবেছিল ছেলের ভবিষ্যৎ ভাল হবে। এর আগেও ওকে পুলিশ ধরেছিল।’’
শুক্রবার রাতে আসিফের কীর্তি প্রকাশ্যে এসে যায়। পুলিশ আসিফকে জেরা করে জানতে পেরেছে, সে বিটকয়েনের মাধ্যমে জুয়া খেলত। হ্যাকিং করেও আসিফ অন্যের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করত বলেও মনে করছে পুলিশ। কম বয়সে টাকা উপায় করতে থাকায় আসিফকে ভালবাসত তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষত, ছোট ছেলেকে নিয়ে গর্ব ছিল তার বাবা জাওয়াদ আলির। জাওয়াদ লিচুবাগান এবং ট্রাক বিক্রি করে আসিফকে টাকা দিয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা, সম্প্রতি টাকার জন্য বাবাকে চাপ দিচ্ছিল আসিফ। কিন্তু তত দিনে জাওয়াদের সঞ্চিত অর্থ প্রায় শেষের পথে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ছোট ভাইকে সাহায্য করতে দেখে আপত্তি জানায় আসিফের দাদা মহম্মদ আরিফও। বাবার কাছ থেকে পড়াশোনার জন্য অর্থ চায় সে-ও। পুলিশের ধারণা, পড়াশোনার জন্য বড়ছেলেকে টাকা দিতে সম্মতি জানান জাওয়াদ। তদন্তকারীদের ধারণা, তার জেরেই হিংসায় খুন করে সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল আসিফ।
শনিবার সকাল থেকেই কালিয়াচকের পুরনো ষোলো মাইল এলাকার ওই বাড়িটির আশপাশে মানুষের ভিড় ভেঙে পড়ে। অবস্থা এমন হয় যে ভিড় সামাল দিতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ আসিফ এবং আরিফ দুই ভাইকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনাস্থলে। দেহগুলি কোথায় আছে তা দেখিয়ে দেওয়ার পরেই দুই ভাইকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর উদ্ধার করা হয় ৪ জনের দেহ। রহস্যের তল পেতে দুই ভাইকে আরও জেরা করছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy