Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

ভূমিপুত্রই পাহাড়ের প্রকৃত প্রতিনিধি 

আশ্চর্যের বিষয়, যখন থেকে গোর্খাল্যান্ড তথা গোর্খা জাত্যাভিমানের লড়াই শুরু হল, তখন থেকেই স্থানীয় ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থীদের বাদ দিয়ে তথাকথিত ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর রমরমা শুরু হল।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রুদ্র সান্যাল
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৫৯
Share: Save:

দার্জিলিং পাহাড়ে এখন প্রবল শীতের দাপট। সমতলেও তার প্রভাব কম নেই। তবুও ঘন কুয়াশায় বিবর্ণ সূর্যের আলোর মাঝেও কোথাও যেন ভোটযুদ্ধের উষ্ণতার এক চোরাস্রোত রয়েছে দার্জিলিং পাহাড়ে।

যখনই ভোট আসে (বিশেষ করে লোকসভা ভোটের সময়), তখনই শুরু হয় পাহাড়ের অলিগলিতে ফিসফাস আলোচনা। এ বার গোর্খাল্যান্ডের জন্য লড়াইয়ের পদক্ষেপ। এ ভাবেই প্রায় ৩৫ বছর কেটে গেল। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। ভোট আসে ভোট যায়। পরিস্থিতি একই রয়ে যায়। আর আশ্চর্যের বিষয়, যখন থেকে গোর্খাল্যান্ড তথা গোর্খা জাত্যাভিমানের লড়াই শুরু হল, তখন থেকেই স্থানীয় ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থীদের বাদ দিয়ে তথাকথিত ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর রমরমা শুরু হল। পাহাড়ের রাজনীতির প্রতিটা ইঞ্চি যিনি হাতের তালুর মতো চিনতেন, সেই সুবাস ঘিসিং, গোর্খা হিল কাউন্সিল বা পার্বত্য পরিষদ গঠনের পরে, বহিরাগত ইন্দ্রজিৎ খুল্লারকে ১৯৮৯ এবং ১৯৯১ সালে জিতিয়ে আনলেন। যদিও এর পরে, কয়েক বছর স্থানীয় প্রার্থী জাতীয় দলের মাধ্যমে জিতে এসেছিলেন। তবু, গত ১৫ বছর ধরে ‘বহিরাগত’ প্রার্থী পাহাড়ের রাজনীতির ভবিতব্য হিসেবে রয়ে গিয়েছেন। আসলে আঞ্চলিক সমস্যার জাতীয় সমাধান চেয়েছিলেন পাহাড়ের নেতৃত্ব। তা সেই সুবাস ঘিসিংয়ের আমলেই হোক বা বিমল গুরুংয়ের সময়েই হোক।

প্রভাবশালী জাতীয় দলের থেকে প্রভাবশালী ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর প্রতি প্রতিবার নির্বাচনে ভরসা করেছে পাহাড়ের শাসক গোষ্ঠী। কারণ, তারা ভাবে, এরাই লোকসভায় তীব্র ভাবে তাদের আঞ্চলিক জাত্যাভিমানকে স্বীকৃতি দেওয়ার লড়াই করবে এবং কেন্দ্রীয় সরকার নতুন রাজ্য এনে দেবে বা এদের ক্ষমতার মাধ্যমেই পূরণ হবে বহু বছরের দাবিদাওয়া। কিন্তু বাস্তবে যখনই ভোট আসে তখনই দেখা যায়, কেন্দ্রের শাসক দল নতুন কাউকে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনে দাঁড় করায়। তিনি নির্বাচনে পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ড আনার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু, সমতলে নামলেই কেমন যেন চুপ হয়ে যান। এই অবস্থায় বর্তমানে পাহাড়ের বিধায়কেরাও এ সব ‘বহিরাগত’ প্রার্থীদের প্রতি আর বিশেষ ভরসা রাখতে পারছেন বলে মনে হয় না। এখন কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত এক আমলা সমতলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং নিজেকে ‘ভূমিপুত্র’ দাবি করে নির্বাচনে দাঁড়ানোর একটা ইঙ্গিত দিয়ে রাখছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, নির্বাচন এলে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র একটা দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হয়। অথচ নির্বাচন শেষে আবার যে কে সেই অবস্থা। পাহাড়ের নেতৃত্বেরও বোঝা উচিত, পুরোটাই পাহাড়ের মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা। মাথায় রাখা উচিত, ভুমিপুত্র ভাবনাও একটা নতুন তত্ত্ব। আঞ্চলিকতাবাদের অতি আধুনিক প্রকাশ। তবু বলব, এ বার জাতীয় দলগুলির উচিত স্থানীয় প্রার্থীদের উপরেই জোর দেওয়া। এই ‘অতিথি’ প্রার্থীদের অনেক দেখা হয়েছে। আর নয়। সমস্যার প্রকৃত সমাধান চাইলে স্থানীয় বিশিষ্টজনদের নিয়েই কাজ করা উচিত। তাতেই পাহাড়ের ভাল হবে।

(শিক্ষক, বিধাননগর সন্তোষিণী বিদ্যাচক্র হাইস্কুল, শিলিগুড়ি)

অন্য বিষয়গুলি:

Darjeeling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy