অঙ্গীকার পত্রে সই করছেন অন্বেষা ও রাতুল। — নিজস্ব চিত্র
বিয়ের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ছাদনাতলাতেই মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার পত্রে সই করলেন এক নবদম্পতি। শনিবার কোচবিহার শহর লাগোয়া খাগরাবাড়ি এলাকায় ওই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন দুই পরিবারের সদস্যরা। কোচবিহারের ‘অনাসৃষ্টি’ নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে অঙ্গীকারে পত্রে সই করলেন তাঁরা।
জটেশ্বর হাইস্কুলের শিক্ষক রাতুল বিশ্বাস ও বাণেশ্বর সারথিবালা কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষিকা অন্বেষা সাহা প্রামাণিকের সম্বন্ধ করেই বিয়ে ঠিক হয়। আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা রাতুলবাবু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘অন্যের দেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মৃত্যুর পরেও জীবনের মানে রেখে যেতে চাই। বিয়ের দিন চূড়ান্ত হতেই তাই অন্বেষাকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানাই। তাতে ও নিজেও আগ্রহ দেখায়। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটা অঙ্গীকার করতে বিয়ের দিনটাকেই বেছে নিই।”
শুক্রবার খাগরাবাড়ি নাট্য সংঘ এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। বাসি বিয়ের দিন বিকেলে ওই অঙ্গীকারে সই করেন নবদম্পতি। স্বামীর পাশে বসে নববধূ অন্বেষা বলেন, “আমার সঙ্গে এক দিন আলাদা করে কথা বলতে চেয়েছিল ও। কিন্তু এমন একটা সিদ্ধান্তের কথা জানাবে, ভাবিনি। ওর কাছে শুনে আমিও দেহদানের ব্যাপারে আগ্রহী হই।” কিন্তু জীবন নতুন করে শুরু করার দিনে দু’জনে মিলিত ভাবে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারের কথা ভাবলেন কেন?
নবদম্পতি এর ব্যাখায় জানান, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় অঙ্গীকারে সই করলেও স্বাভাবিক মৃত্যুর পরেও দেহদান নিয়ে স্বামীর ক্ষেত্রে স্ত্রী, স্ত্রীর ক্ষেত্রে স্বামী আপত্তি করেন। এমন সমস্যা এড়াতেই নতুন জীবন শুরুর শুভ দিনে সবার সামনে এক সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন তাঁরা। দুই পরিবারের আত্মীয়দের অনেকেই জানান, ওঁদের সিদ্ধান্তে তাঁরাও ভীষণ খুশি।
যাঁদের মাধ্যমে ওই নবদম্পতি দেহদানের অঙ্গীকারে সই করেন, সেই ‘অনাসৃষ্টি’র তরফে রুমা সাহা, সুমন্ত সাহারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন একটি সংস্থার মাধ্যমে এই কাজ করেন তাঁরা। রুমাদেবী বলেন, “এমন সিদ্ধান্তের নজির খুব বেশি নেই। দারুণ অনুভূতি।” সুমন্তবাবু বলেন, “তবে জেলাস্তরে দেহদানের আরও ভাল পরিকাঠামো তৈরির উদ্যোগ দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy