শুভারম্ভ: স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ইব্রাহিম। নিজস্ব চিত্র
সমবয়সীরা যখন স্কুলে পড়াশোনায় ব্যস্ত, তখন ছেলেটা কাঁধে আইসক্রিমের বাক্স নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে স্কুলে গেটে। টিফিনের ঘণ্টা বাজলেই পড়ুয়ারা বাইরে বেরিয়ে তাঁর কাছ থেকে আইসক্রিম কিনে খাবে। এটাই রোজনামচা ছিল শোভানগরের নাসিনগরের বছর চোদ্দোর বালক ইব্রাহিম শেখের। সেই রুটিনেই বদল ঘটাল। আইসক্রিমের বাক্স নয়, ছোট্ট ইব্রাহিমের হােত উঠল বই-খাতা।
দিনের শেষে সাকুল্যে রোজগারের পঞ্চাশ টাকা বাড়ি ফিরে গিয়ে গরিব বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে হয়। পেটের দায়েই ইব্রাহিমকে ইতি টানতে হয়েছে পড়াশোনায়। সংসার চালাতে তাই সে আইসক্রিম বিক্রি করত। স্কুলের গেটের এই দৃশ্য নজর এড়ায়নি শোভানগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাসের। শনিবার নিজের পকেট থেকেই ভর্তির ফি দিয়ে তাঁকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করলেন হরিস্বামীবাবু। শুধু তাই নয়, ইব্রাহিমের কাঁধ থেকে আইসক্রিমের বাক্স নামিয়ে এ দিন তার হাতে তুলে দেওয়া হয় বই। দেওয়া হয় খাতা-কলম, স্কুলের পোশাক, মিড ডে মিল খাবার থালা-গ্লাসও। এ দিন ইব্রাহিমের সমস্ত আইসক্রিমের দামও মিটিয়ে দেন স্কুল শিক্ষকেরা। জানানো হয়, আগামী দিনে ওর লেখাপড়ার সমস্ত খরচও দেবে স্কুল।
কয়েক দিন আগেই হরিস্বামীবাবু ইব্রাহিমের হাত ধরে নিয়ে যান স্কুলের ভেতরে। শোনেন, তার বাবা মনসুর শেখ পেশায় ভ্যানচালক। ইব্রাহিমরা চার ভাই। বড় ভাই হাফিজুল বিয়ের পর থেকে আলাদা থাকে। মেজো ভাই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। স্ত্রী-সহ পাঁচ জনের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় মনসুরকে। সংসারে কিছুটা অর্থের জোগান দিতেই তাই বাড়ির সেজো ছেলে ইব্রাহিমকে তিন বছর আগে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। সে সময় সে মোতিনগর ম্যানেজড প্রাইমারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত।
প্রথমে বিভিন্ন বাজার ও পাড়ায় ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করত ইব্রাহিম। মাস কয়েক ধরে শোভানগর হাই স্কুলের বাইরে বিক্রি করতে আসে। তার সঙ্গে কথা বলে হরিস্বামীবাবু বুঝতে পারেন সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হলেও তার পড়াশোনা করার ইচ্ছে মরে যায়নি। তার বাড়িতে অন্য শিক্ষকদের পাঠিয়ে পরিবারের অবস্থারও খোঁজ নেন। তার পরই এ দিন এমন পদক্ষেপ। প্রধান শিক্ষক-সহ স্কুলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই।
এ দিন স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ইব্রাহিম বলেছে, ‘‘আমার লেখাপড়ায় ঝোঁক আছে। কিন্তু সংসারের টানাটানিতে বাবা পড়াতে পারছিল না। বাধ্য হয়ে আইসক্রিম বিক্রি করছিলাম।’’ প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘‘আমরা স্কুলের তরফে ইব্রাহিমের লেখাপড়ার খরচ তো জোগাব। কিন্তু ইব্রাহিমের এখন একটা চিন্তা মিটছে না, সে স্কুলে পড়লে বাবা একা কী ভাবে সংসার সামলাবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy