ভূমিকম্পের পরে ছুটি হয়ে গেল স্কুল। শিলিগুড়িতে বিশ্বরূপ বসাকের ছবি।
ওঠেনি কেউ
ইউনিট টেস্ট চলছিল আলিপুরদুয়ার ম্যাকউইলিয়ম হাইস্কুলে। সওয়া ৪টে নাগাদ ভূমিকম্পে স্কুলবাড়ি কেঁপে ওঠে। কিছুটা ভয় পেয়ে একে অন্যের মুখের দিকে তাকালেও কোনও পরীক্ষার্থী সিট ছেড়ে ওঠেনি। প্রধানশিক্ষক সুধাংশু বিশ্বাস বলেন, ‘‘সবাই একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা ছেড়ে কেউ ওঠেনি। কম সময়ের জন্য ভূমিকম্প হওয়ায় পরীক্ষাতেও বিঘ্ন ঘটেনি।’’ শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন দাস বলেন, ‘‘সে সময় নবম, দশম শ্রেণির ক্লাস চলছিল। ছাত্ররাও কেউ বার হয়ে আসেনি।’’ রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্কুল ছুটির মুখে ভূমিকম্প হয়। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছুটি হয়ে গিয়েছিল। ভূমিকম্প হওয়ামাত্রই সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের তড়িঘড়ি ক্লাসরুম থেকে বাইরে বার করে দেওয়া হয়।
উদ্বেগ কাটল
কোচবিহার জেলা হাসপাতালের সুপার জয়দেব বর্মন খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। কারণ, কয়েকশো রোগী হাসপাতালে। আচমকা দুলুনি শুরু হতেই চমকে যান। ভূমিকম্প হচ্ছে। কত সিরিয়াস রোগী আছে। কী যে হবে ভেবে অফিসের চেয়ার থেকে উঠে পড়েন। বাইরে বেরোতেই ঝাঁকুনি থেমে যায়। উদ্বেগ কাটল। রোগীরা ঘাবড়ে গেলেও কেউ ছোটাছুটি করেননি। শিলিগুড়ি হাসপাতালে সহকারী সুপার সাগরচন্দ্র শীল জানান, তিনি ভূমিকম্প টের পাননি। পরে হাসপাতালে খোঁজ নিতে যান। তবে সেখানে কেউ বার হয়ে আসেনি। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের সময় হাসপাতালেই ছিলাম ৷ কিছু রোগীর মধ্যে সামান্য আতঙ্ক ছড়ালেও কেউ বাইরে বেরিয়ে আসেনি৷ অনেক রোগী আবার ভূমিকম্প টেরও পাননি৷
প্লেটে সংঘর্ষ
ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল মায়ানমার। তবে সিকিমের বেশ কিছু এলাকায় অনুভূত হয়েছে। ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের নড়াচড়ার কারণেই কম্পন হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের যা মাত্রা ছিল, তাতে আফটার শক নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু তার প্রভাব উত্তরবঙ্গ বা সিকিমে টের পাওয়া যাবে না বলেই মনে হয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক সুবীর সরকার জানালেন, যতটুকু খোঁজ নিয়েছেন, ভূগর্ভস্থ দুই প্লেটের সংঘর্ষেই মাটি কেঁপে উঠেছিল। অনেক চ্যূতি থাকায় বরাবরই এই দু’টি প্লেট অস্থির।
পাখিরা বুঝেছিল
উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বিপর্ণ দত্ত জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা ভূমিকম্প হলে পাখিরা আগে টের পায়। এ দিন ভূমিকম্প হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসের বিভিন্ন গাছে বাসা বেঁধে থাকা বহু পরিযায়ী পাখি কিছুক্ষণের জন্য আকাশে উড়ে যায়। পরে আবার তারা আবার গাছে ফিরে আসে।
পর্যটকেরা চিন্তায়
ছুটিতে সপরিবারে পাহাড়ে বেড়াতে এসেছেন কলকাতার তপতী দত্ত। ম্যালে ঘুরে বেড়ানোর সময় আচমকা মনে হল, একটু কেঁপে উঠলেন। তারপরেই হোয়াট্যসঅ্যাপ, ফোনে জানতে পারলেন সারা রাজ্য জুড়ে ভূমিকম্প হয়েছে। রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়ে হোটেলে খবর নিয়েছেন, তাড়াতাড়ি সমতলে নামতে পারবেন কি না। পরে হোটেল কর্মীরাই আশ্বস্ত করেছেন। আর এক পর্যটক রত্না হালদার সিকিমে একই আতঙ্কের মধ্যে পড়েছিলেন।
খেতে বাধা
দল ও প্রশাসনের হাজারটা কাজ সেরে বেলা পৌনে ৪টে নাগাদ বাড়িতে পৌঁছে স্নান সেরে সবে খেতে বসছিলেন তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। কিন্তু, ঠিক তখনই সব দুলে ওঠে। তাড়াহুড়ো করে ঘরের বাইরে বার হন। পরিবারের সকলেও বাইরে বেরিয়ে আসেন। ততক্ষণে দুলুনি থেমে গিয়েছে। সৌরভবাবুর কথায়, ‘‘অল্পের উপর দিয়ে গিয়েছে।’’
কে নড়ছে
কাঠ বিক্রি করেন ফালাকাটার অজিত রায়। টুলে বসে দোকনদারি করছিলেন। হঠাৎ দুলে উঠল টুল। পড়েই যাচ্ছিলেন। কোনও মতে সামলে নেনে। অজিতবাবু বলেন, ‘‘প্রথমে ভাবলাম আমি নড়ছি। পরে ভাবলাম টুলটা নড়ছে। যখন বুঝলাম ভূমিকম্প, তখনই এক ছুটে দোকানের বাইরে রাস্তায়।’’
আফটার শক
জলপাইগুড়ি শহরের পাণ্ডাপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৃহবধু সুমনা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রথমবার তো অল্পক্ষণ কাঁপল। ভয় হচ্ছিল আফটার শক না হয়। তাই ছেলে-মেয়েকে নিয়েই রাস্তায় বেরিয়ে আসি৷’’ শিলিগুড়িতেও কিছু বহুতলের বাসিন্দা একই ভয় পাচ্ছেন। তাঁরাও বলছেন, নেপালে ভূকম্পের পরে বেশ কয়েকবার আফটার শক হয়েছিল। সেই আতঙ্ক যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy