সপ্তমীর ভোরে মাস্ক ছাড়াই শোভাযাত্রায় শামিল হলেন কাতারে কাতারে মানুষ। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুজোর প্রথা পালনে গুরুত্ব হারাল করোনাবিধির কড়াকড়ি। চাঁচল রাজবাড়ির সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো পুজোর শোভাযাত্রায় কাতারে কাতারে উৎসাহী ভক্তের ভিড়ে তুচ্ছ হল করোনায় সংক্রমণের আতঙ্ক। মঙ্গলবার সপ্তমীর ভোর থেকে মাস্ক ছাড়াই শহরের পথে শোভাযাত্রায় শামিল হলেন হাজার তিনেক মানুষ। অভিযোগ, মাস্কহীন জনতাকে দেখেও কার্যত নির্বিকার ছিল ভিড় সামলাতে ব্যস্ত পুলিশ-প্রশাসন। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত এড়াতেই নাকি এই শিথিলতা বলে দাবি তাদের একাংশের।
চাঁচলের রাজপরিবারের এই প্রাচীন পুজোয় সপ্তমীর ঊষালগ্নে সিংহবাহিনীর বিগ্রহ নিয়ে শোভাযাত্রা শুরু হয়। রাজবাড়ি থেকে দেবী চণ্ডীর কোষ্ঠীপাথরের বিগ্রহ নিয়ে যাওয়া হয় পাহাড়পুর চণ্ডীমন্দিরে। পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ, ঢাকের বাদ্যির ধ্বনিতে মুখরিত হয় শহর। কথিত, সপ্তদশ শতকের শেষভাগে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেন উত্তর মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরী। স্বপ্নাদেশে মেনে মহানন্দার সতীঘাটার নদী থেকে দেবীর অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা মূর্তি তুলে এনে রাজপরিবারের মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তার পর থেকেই এই পুজো হয়ে আসছে।
মঙ্গলবার ঐতিহ্য মেনে শোভাযাত্রা হলেও অবহেলিত হয়েছে করোনাবিধি। যদিও তা মানতে নারাজ চাঁচল রাজপরিবারের ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারভাইজার দেবাজয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘মহামান্য আদালতের নির্দেশ মেনেই দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছে। মণ্ডপের ভিতরে ঢোকা নিষিদ্ধ। ব্যারিকেড করে মন্দিরের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। গর্ভগৃহেও ঢোকা নিষেধ। ঠাকুরদালানের বাইরে থেকেই পুজো দিতে হবে। প্রত্যেক দর্শনার্থীকেই মাস্ক বিলি করা হচ্ছে। দূরত্ববিধি মেনে ঠাকুর দেখার জন্য আমরা প্রচারও করছি।’’
যদিও শোভাযাত্রায় ভক্ত থেকে উদ্যোক্তা বা ঢাকি— কারও মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। গাদাগাদি ভিড়ে দূরত্ববিধিও শিকেয় উঠেছে। শোভাযাত্রায় শামিল বিশ্বনাথ সাহা অবশ্য নির্বিকার ভাবেই বলেন, ‘‘মাস্ক না পরে অন্যায় হয়ে গিয়েছে।’’ করোনাবিধি পালনে অনীহা সত্ত্বেও অনুপ দাসের মন্তব্য, ‘‘দুটো ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছি। মাস্ক পরব কেন?’’
সাধারণের মতোই প্রশাসনের তরফেও ঢিলে়ঢালা মনোভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এটা ধর্মীয় বিষয়। ফলে এ নিয়ে মন্তব্য করব না। আমরা কারও ভাবাবেগে আঘাত করতে চাই না। তাই মাস্কহীনদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ প্রায় একই সুর চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘‘সপ্তমীর ভোরে প্রথামাফিক শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দীর্ঘদিন ধরে বহু মানুষ জড়ো হন। আজকের ঘটনা তারই প্রতিফলন। কড়াকড়ি করে মানুষের ভাবাবেগকে বেঁধে রাখা যায় না। তবে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষজন সতর্ক হলে ভাল হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy