পাঁচ মন্ত্রীর পুজোতেই দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
পুজো তো আর নিছক পুজো নয়! মণ্ডপ ও প্রতিমার মাধ্যমে নানা বার্তা তুলে ধরাও। কলকাতায় এমন ধারার বয়স হল অনেকটাই। আর এই লড়াইয়ে রাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রীর পুজোর নাম উঠে আসে সবার আগে। শাসক তৃণমূলের অনেক নেতাই দীর্ঘ দিন বিভিন্ন পুজোর সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বেছে নেওয়া হল রাজ্যেরপাঁচ মন্ত্রীর পুজো। কমিটিতে তাঁদের নাম রয়েছে কি না, কিংবা তাঁরা একেবারে সামনে থেকে সবটা করেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু এই পাঁচ পুজো পাঁচ মন্ত্রীর বলে পরিচিত।
সবার প্রথমে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিকের ‘একডালিয়া এভারগ্রিন’ শহরের চিরসবুজ পুজোর অন্যতম। থিমের বাহুল্য নেই। তবে ভিড় টানায় প্রথম দশে জায়গা করে নেয় ফি বছর। থিম নয়, জাঁকজমকের এই পুজোয় মণ্ডপ, প্রতিমার পাশাপাশি আলোকসজ্জাই দর্শনার্থীদের কাছে বড় আকর্ষণের। এ বার ৭৯তম বছরেও সেই টান বজায় রেখে মণ্ডপে ঢুকে উপর দিকে তাকাতেই হবে। সাবেকি ঢঙের প্রতিমার সঙ্গে মানানসই রাজকীয় ঝাড়বাতিই তো একডালিয়ার ইউএসপি।
রাজ্যের আবাসন ও পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম একই সঙ্গে কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসকও। ‘চেতলা অগ্রণী’-র পুজো ববির পুজো নামেই পরিচিত। এ বার ২৯তম বছর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবীর চক্ষুদান করেছেন। তবে শুধু প্রতিমা নয়, এখানে আকর্ষণ মণ্ডপও। এ বারের থিম— ‘অনুসরণ’। করোনা আবহে অনেকটা খোলামেলা মণ্ডপ হয়েছে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, করোনাভাইরাসে যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের স্মরণ করাই এ বারের আয়োজনের লক্ষ্য।
মন্ত্রীদের পুজোর লড়াইয়ে বাদ দেওয়া যাবে না নিউ আলিপুরের ‘সুরুচি সঙ্ঘ’-কে। রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ক্লাব নাকি একটা পুজো শেষ হতে না হতেই পরের বছরের ভাবনা শুরু করে দেয়। পুজো শেষ হতেই কমিটির মাথারা সদলবলে কোনও নতুন জায়গায় বেড়াতে চলে যান। সেখান থেকেই নিয়ে আসেন মণ্ডপ-প্রতিমার নতুন ভাবনা। তেমন করেই তৈর হয় থিম। এ বারের বিষয় ‘আবদার’। করোনায় গৃহবন্দি শিশুদের মনের কথা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। কবে করোনাকে ভয় না পেয়ে বাড়ির বাইরে বেরোতে পারা যাবে তারই আবদার জানানো হয়েছে মহামায়ার কাছে।
সদ্যই মাতৃবিয়োগ হয়েছে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তাই এ বার তিনি সে ভাবে পুজোর সঙ্গে যুক্ত নন। তবে ‘নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ’-কে সবাই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থর পুজো বলেই চেনে। একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনা উঠে এসেছে সেখানকার থিমে। তালিবানি-তাণ্ডবে রক্তাক্ত আফগানিস্তানের কথা বলা হয়েছে ক্লাবের এ বারের থিমে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘চল্ চিত্র’। মুলুক বদলে ভিন্দেশে পাড়ি দেওয়া মানুষদের চলমান ছবিই ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী প্রদীপ দাস। বিভিন্ন সময়ে এ যন্ত্রণার সাক্ষী হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। ঘরছাড়াদেরফেলে আসা স্মৃতি, আপনজনের স্নেহ, নদী-মাঠ, রাগ, অভিমান, ভালবাসা, আনন্দ, যন্ত্রণার কাহিনিতে মিশেছেন আফগানিস্তান থেকে, ওপার বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তুরা।
সবার শেষে দর্শনার্থীদের আগ্রহে এ বারেও সবার উপরে ‘শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব’। রাজ্যের দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী সুজিত বসুর পুজো হিসেবেই পরিচিত ‘শ্রীভূমি’। তবে এই পুজোর রাজনৈতিক ইতিহাসও দীর্ঘ। বাম জমানায় দাপুটে মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীই ছিলেন এই পুজোর মাথা। তবে বকলমে তাঁর শিষ্য সুজিতই করতেন যাবতীয় আয়োজন। একটা সময়ে কমিউনিস্ট সুজিত তৃণমূল হয়েছেন। তবে তার অনেক আগে থেকেই প্রয়াত সুভাষের পুজো সুজিতের নামেই খ্যাত হয়ে যায়। এ বার সেখানে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে ‘বুর্জ খলিফা’-র আদলে। দুবাইয়ের যে বাড়ি বিশ্বের উচ্চতম স্বীকৃতি পেয়েছে সেটাই এ বার কলকাতায় ভিআইপি রোডের ধারে। অতীতেও কখনও বাহুবলী, কখনওপদ্মাবত সিনেমার সেটের আদলে মণ্ডপ বানিয়ে বাজিমাৎ করেছে এই পুজো। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। কলকাতা তো বটেই জেলা থেকে মানুষের কাছেও আকর্ষণ একবার ‘বুর্জ খলিফা’ দেখতেই হবে। হাওড়া থেকে ছাড়া এয়ারপোর্টগামী বাসের কন্ডাক্টারও যাত্রী টানতে চেঁচাচ্ছেন, ‘‘শ্রীভূমি, বুর্জ খলিফা, শ্রীভূমি।’’ কোনও কোনও বাসে আবার ছাপানো পোস্টার, ‘শ্রীভূমি যাইবে, বুর্জ খলিফা যাইবে’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy