Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

মন্দার ধাক্কায় বেসামাল বাড়ি শিল্প

আবাসন তৈরির ব্যবসায় যুক্ত একটি সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, গত ছ’মাসে উত্তরবঙ্গে নতুন ফ্ল্যাটের বিক্রি কমেছে গড়ে ৪২%। ফলে ফ্ল্যাট তৈরি কমেছে গড়ে ২৮%।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুভঙ্কর চক্রবর্তী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০৮
Share: Save:

ভাঁড়ারে যেমন পড়েছে মন্দার ছায়া, কমেছে মুড়ি, বিস্কুট, সাবান, ডিটারজেন্ট কেনা, তেমনই এই মেঘ ছেয়ে রয়েছে নির্মাণশিল্পের আকাশেও। ফলে বিক্রি কমেছে ফ্ল্যাট, নতুন বাড়ি তৈরির। যার প্রভাবে নির্মাণ সামগ্রীর বিক্রি ও উৎপাদনও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। উত্তরবঙ্গে ব্যবসার একটা বড় অংশ দখল করে আছে সিমেন্ট, লোহার রড ইত্যাদি। আবাসন তৈরির ব্যবসায় যুক্ত একটি সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, গত ছ’মাসে উত্তরবঙ্গে নতুন ফ্ল্যাটের বিক্রি কমেছে গড়ে ৪২%। ফলে ফ্ল্যাট তৈরি কমেছে গড়ে ২৮%। ব্যক্তিগত বাড়ি তৈরি, সংস্কারের হার কমেছে গড়ে ৩৩%।

ওই সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পিএফ-সহ অবসরকালীন টাকা বা অন্যান্য জমানো অর্থ নতুন বাড়ি তৈরি বা ফ্ল্যাট কেনাতে কাজে লাগায় মধ্যবিত্ত। অনেকে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও নেন। এখন একটা বড় অংশের মানুষই জমানো টাকা খরচ করতে ভয় পাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। আমাদের সেলস এগজ়িকিউটিভরাও বারবার বুঝিয়ে সুবিধে করতে পারছেন না।’’ নর্থবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে মধ্যবিত্ত মানুষ খরচের ক্ষেত্রে সাবধানী। ফলে খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ি সংস্কার, রং করানো বা নতুন বাড়ি কেনায় তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’’

ফ্ল্যাট বা বাড়ির সঙ্গে যেমন নির্মাণ সামগ্রীর বাজারের সম্পর্ক আছে, তেমনি অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছে আরও কিছু সহযোগী শিল্পজাত দ্রব্য। বিস্কুট, কেক-সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর বিক্রি ও উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে সেই সব সামগ্রী প্যাকেটজাত করার কাজে যে কাগজের বাক্স ব্যবহার করা হয়, তার বিক্রিও কমেছে। একই ভাবে সিমেন্টের উৎপাদন কমায় কমেছে সিমেন্টের বস্তার বিক্রি। তরাই, ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকা ও মালদহে বেশ কয়েকটি পাথর ভাঙার ইউনিট আছে। সেই সব ইউনিট সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্যহারে বিক্রি কমেছে পাথরেরও।

একটি সিমেন্ট কারখানার ম্যানেজার বলেন, ‘‘বর্ষার কারণে প্রতি বছরই তিন মাস বালি, পাথর তোলা বন্ধ থাকে। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর কয়েক মাস আমাদের বিক্রি কার্যত দ্বিগুণ হয়ে যায়। সেই হিসেবে এ বার বিক্রি ৫০ শাতংশেরও বেশি কমে গিয়েছে।’’

একটি প্লাইউড কারখানার মালিক বলেন, ‘‘স্বাভাবিক বিক্রি তো কমেইছে। পুজোর মরসুমে প্রত্যেকবারই আমাদের গড়ে ১৫ শতাংশ বাড়তি বিক্রি হয়। বিভিন্ন পুজো কমিটি মন্দির তৈরির কাজে প্লাইউড ব্যবহার করে। এ বার ৫ শতাংশও বাড়তি বিক্রি হয়নি।’’ মন্দার কালো মেঘ কেটে কবে ফের জমজমাট হবে বাজার, এখন সেই আশাতেই দিন গুণছেন কারখানার মালিক থেকে ছোট ব্যবসায়ী, সকলেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE