ফাইল চিত্র
অপরাধজগতে মুখে মুখে এখন ঘুরে বেড়ায় একটি শব্দ, ‘হোম ডেলিভারি’। অনলাইনে কেনাকাটায় এখন সকলের কাছেই পরিচিত এই শব্দ দু’টি। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কখনও ‘পিৎজা’, কখনও ‘বার্গার’ ডেলিভারি হচ্ছে কোচবিহারে। গ্রামের দিকে সেগুলিরই নাম বদলে হয়ে যাচ্ছে ‘কলা’ ও ‘বিচি। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এখনও কোচবিহারে অস্ত্র আসে মূলত বিহারের মুঙ্গের থেকে। উত্তর দিনাজপুর দিয়ে ঢুকে শিলিগুড়ি, তার পর সেখান থেকে কখনও জলপাইগুড়ি, কখনও ডুয়ার্সের পথে ওই অস্ত্র এসে পৌঁছয় কোচবিহারে। সড়ক ও রেলপথ, দুটোই ব্যবহার করে অস্ত্র কারবারিরা।
কোচবিহার থেকে সড়কপথে মুঙ্গেরের দূরত্ব প্রায় ৪৩০ কিলোমিটার। রেলপথে তা কিছুটা কম। দু’ক্ষেত্রেই যাতায়াতে ১০-১২ ঘণ্টা লাগে। এতটা দূরত্ব আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চুপিসাড়ে যাতায়াত কী ভাবে সম্ভব? এত দূর হওয়া সত্ত্বেও মুঙ্গের থেকেই কেন অস্ত্র কিনছে কারবারিরা? তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই কারবারে একাধিক মাথা কাজ করছে। তারা মুঙ্গের থেকে কোচবিহার পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। এক এক দফায় অস্ত্র মুঙ্গের থেকে অন্তত পাঁচ হাত ঘুরে এসে পৌঁছয় কোচবিহারে। তাই দূরত্ব অনুসারে দাম বাড়ে। অস্ত্র যারা পৌঁছে দেয়, তারা পরিচিত ‘ক্যারিয়ার’ নামে। আগ্নেয়াস্ত্র পিছু তাদের দর দু’হাজার টাকা। এক এক জন অস্ত্র বহন করে পঞ্চাশ থেকে একশো কিলোমিটার অবধি। তার পরে সে তুলে দেয় পরবর্তী লোকটির হাতে। এই জগতে এদের নাম ‘লাইনম্যান’। যারা পুলিশের গতিবিধি লক্ষ্য করে, তাদের জন্যে আলাদা ‘দর’। প্রতি ট্রিপে তারা রাখে ৫-৭ হাজার টাকা।
মুঙ্গের থেকে খাগরিয়া জংশন হয়ে নিউ কোচবিহার— এই হল একটি রুট। এই পথ পার হতে দশ ঘণ্টার কিছু বেশি লাগে। না হলে বাসে মুঙ্গের থেকে পূর্ণিয়া, কিসানগঞ্জ, শিলিগুড়ি হয়ে কোচবিহার। শিলিগুড়ি থেকে অবশ্য একাধিক পথ আছে। কেউ ডুয়ার্সের পথ ধরে, কেউ ফালাকাটা হয়ে কোচবিহারে পৌঁছয়। বাংলাদেশ সীমান্ত পথে কড়াকড়ি একটু বেশি। তাই সে পথ এড়িয়ে যায় কারবারিরা। কদাচিৎ তারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করে। অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রিবাহী গাড়ি বা ট্রেনই কারবারিদের বেশি পছন্দ। কখনও জামাকাপড়, কখনও খেলনা, কখনও খাবারের প্যাকেটের আড়ালে করে ওই অস্ত্র আনা হয়।
কিন্তু মুঙ্গের কেন? অভিযোগ, বিহারের এই এলাকা অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল বলে পরিচিত। ওই এলাকায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির একাধিক কারখানা রয়েছে বলে অভিযোগ। অল্প দামে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায় এখানে। এখন হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে অস্ত্রের ছবি, গুণ যাচাই করে কোচবিহার থেকে ‘বরাত’ যাচ্ছে মুঙ্গেরে। এর বাইরে অসম ও মেঘালয় থেকেও কিছু অস্ত্র আসছে, সন্দেহ পুলিশের। কিন্তু এখনও তা নিয়ে প্রামাণ্য তথ্য মেলেনি। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সমস্ত রুটে তল্লাশি রয়েছে। বাস ও ট্রেন দু’জায়গাতেই তল্লাশি চলে। তার পরেও কারবারিরা হাত ফসকে বেরিয়ে যায়, তা অস্বীকারের জায়গা নেই।”
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy