প্রার্থীকে নিয়ে মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর পাখির চোখ দলকে শিলিগুড়ি পুরসভায় একক ভাবে ক্ষমতায় আনা। তাই প্রচারের শেষ পর্বে এসেও বারবার ভাবনা চিন্তা করছেন, কোন ওয়ার্ডে প্রচারে খামতি রইল! কোথায় একবারও যাওয়া হয়নি! কোথায় দলের প্রার্থীরা বারবার যেতে বলছেন। সে দিকে নজর দিয়েই বৃহস্পতিবার শেষ দিনের প্রচারে ব্যস্ত থাকলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।
শেষ দিন। তাই নিজের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী স্ত্রী শুক্লা দেবীর হয়েও প্রচারে বার হতে দেখা যায়নি তাঁকে। এই ওয়ার্ড তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। বরাবর এই ওয়ার্ডে তিনি জিতে এসেছেন। তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসীও। তাই এই ওয়ার্ডে কোনও চলচ্চিত্র তারকাকে প্রচারে ডাকা হয়নি। অন্য দিন হলে প্রচারে বার হওয়ার আগে সকালের দিকে নিজের ওয়ার্ডে একটু ঘুরে নেন। এ দিন অবশ্য দলের কর্মীরাই শুক্লাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে প্রচার সারলেন। পরে এক ফাঁকে পাড়ার দলীয় কার্যালয়ে অল্প সময়ের জন্য বসে গৌতমবাবু চা খেয়েছেন সেই ফাঁকে কর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন এটুকুই। এ দিন সকাল সাড়ে আটটায় গৌতমবাবু বেরিয়ে পড়েন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্দেশ্যে। সেখানে কর্মীরা ততক্ষণে মন্ত্রীর অপেক্ষা করছিলেন।
৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে বুধবার দেবের রোডশোর কথা ছিল। কিন্তু ভিড়ের জেরে পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে রাজা রামমোহন রায় রোড থেকে হায়দরপাড়া মেইন রোডে দেবের গাড়ি আর যায়নি। তা ছাড়া দেবের রোড শো হবে বলে এই ওয়ার্ডে সুব্রত বক্সির অনুষ্ঠান জেলা কমিটি থেকে বাতিল করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে যাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয় সে জন্য এ দিন সকালে এলাকায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে নিয়ে প্রচার মিছিল বার করা হয়। এলাকার প্রাথমিক স্কুলের সামনে তাদের দলের কার্যালয় থেকে মিছিল শুরু হয়। তটা সম্ভব এলাকায় ঘোরেন তিনি। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘নিজের ওয়ার্ড নিয়ে ভাবি না।ওখানে মানুষকে বরাবর পাশে পেয়েছি এবারও পাব। তা ছাড়া এ বার পুরভোটে আমরা বেশ ভাল আসনে জিতব বলেই আশাবাদী।’’
দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিলিগুড়িতে রয়েছেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি দুই একটার বেশি ওয়ার্ডে যেতে পারবেন না। তাই গৌতমবাবুকেই দেখতে হবে প্রচারের শেষ পবর্টা। এ দিন ভোরে উঠে চা খেয়ে খবরের কাগজগুলি দেখে নেন। কিছুক্ষণ শরীর চর্চার করেন। তার পর সাড়ে আটটা নাগাদ দই চিঁড়ে খেয়ে বেরিয়ে পড়েন প্রচারে।
রাত পোহালেই ভোট। উৎসবের মেজাজ জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল।
হায়রপাড়া থেকে মন্ত্রী যান ২০ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী রঞ্জন সরকার। প্রচারে শেষ বেলায় একটু জোর দিতে তিনি মন্ত্রীকে এ দিন ওয়ার্ডে য়েতে অনুরোধ করেছিলেন। সেখান থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মিছিলের আয়োজন করতে আরও কিছুটা দেরি হবে বলে প্রার্থী এবং তাদের লোকজন জানান। এই ফাঁকে বাড়ি ফিরে স্নান খাওয়া সারেন। ভাত, ডাল, সুক্ত, ছোট মাঝের পাতলা ঝোল, টক দই দিয়ে খাওয়া সেরে রওনা হন ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখান থেকে নিউ জলপাইগুড়ি এলাকায় মহামিছিলে যোগ দেন। ততক্ষণে অবশ্য মিছিল শুরু হয়ে গিয়েছে। মাঝপথে মিছিলে পা মেলান। মিছিলের বহর দেখে খুশি। বাকিরা ঠিক সমলাচ্ছে দেখে ১০ মিনিট হেঁটে তিনি চলে যান ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার সূচিতে। ওই ওয়ার্ডে সংখ্যালঘুদের একটা ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে ত্রিমুখী লড়াই। এলাকার একটি মাদ্রাসায় বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে রাস্তা, নিকাশির মতো সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেন। সেখান থেকে ৩৬ এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুটি পথসভায় যোগ দেন। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী অলোক ভক্ত এ দিন গৌতমবাবুকে যেতে বারবার অনুরোধ করেছিলেন। অন্য দিকে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী প্রতুল চক্রবর্তীর প্রচারে একদিনও যাওয়া হয়নি গৌতমবাবুর। সেখানে এ দিন পথসভা করেন তিনি। প্রতুলবাবুর ওয়ার্ড থেকে ফিরে শিল্পমন্ত্রী তথা দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে প্রচার শেষে সাংবাদিক বৈঠক করেন। গৌতমবাবুর উপর দায়িত্ব দিয়ে এ দিন পার্থবাবু ফিরে গিয়েছেন। তাঁকে আশ্বস্ত করে বাগডোগরা বিমানবন্দরে ছাড়তেও যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy