দাবি: দার্জিলিঙে মিছিল মোর্চার। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ, আন্দোলন মিটিং-মিছিলেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তা সত্ত্বেও পাহাড়ে নিয়মিত চলেছে হামলা আর আগুন লাগানোর ঘটনা। আর সেই হাঙ্গামার দায় থেকে নিজেদের দূরত্ব তৈরি করতে বারবার বিবৃতি দিতে হচ্ছে মোর্চা নেতাদের। কিন্তু এই ঘটনা থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি আন্দোলনের রাশ আর পুরোপুরি বিমল গুরুঙ্গের হাতে নেই? তাই তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করে হাঙ্গামা চালিয়েই যাচ্ছেন দলের কট্টরপন্থীরা? দলের একাংশ এ কথা মেনেও নিচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের গোয়েন্দারাও নজর রাখতে শুরু করেছেন দ্বিতীয় সারির নেতাদের দিকে। আগামী দিনে তাঁদের কে সামনের সারিতে আসতে পারেন, সেটা আঁচ করে রিপোর্টও তৈরি হচ্ছে। এই চাপের মুখেই সোমবার রোশন গিরিকে ঘোষণা করতে হয়েছে, ‘‘বিমল গুরুঙ্গ আমাদের নেতা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।’’
গুরুঙ্গ এক সময়ে সুবাস ঘিসিঙ্গের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরে সেই ঘিসিঙ্গকে ক্ষমতাচ্যুত করে পাহাড়ে একচ্ছত্র হয়ে ওঠেন তিনি। এ বারে গুরুঙ্গের ঘাড়ে কারা নিঃশ্বাস ফেলছেন? মোর্চার যে কোনও অফিসে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে কয়েকটি নাম— বিনয় তামাঙ্গ, প্রকাশ গুরুঙ্গ, প্রিয়বর্ধন রাই, অম্রুত ইয়নঞ্জন, নরবুজি লামা, প্রভা ছেত্রী ও অনীত থাপা। এঁরা সকলেই লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান। রয়েছেন প্রবীণ স্যামুয়েল গুরুঙ্গ, আর বি ভুজেলের মতো নেতারাও।
মোর্চা জিটিএ বর্জনের সময়ে যাঁরা সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে আছেন যুব মোর্চার সভাপতি প্রকাশ গুরুঙ্গ, ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতা প্রিয়বর্দন রাই, অম্রুত ইয়নঞ্জনের মতো কয়েক জন। দলের যুব সংগঠনে প্রকাশের কর্তৃত্ব নিয়ে খোদ গুরুঙ্গও প্রশংসা করেছেন। প্রকাশের উদ্যোগেই টিউবলাইট-কাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু, তাঁর বাড়ি রোহিনী এলাকায়। সুবাস ঘিসিঙ্গ বা বিমল গুরুঙ্গ, দু’জনই কিন্তু খাস দার্জিলিঙের লোক। তাই ইদানীং প্রকাশ দার্জিলিঙে থাকছেন। এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে তিনি যে অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে থাকবেন, দলের অনেকেরই তাতে সন্দেহ নেই।
একই ‘সমস্যা’ মধ্য চল্লিশের নরবুজি লামাকে নিয়েও। তিনি তাকদার বাসিন্দা। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা দেখে ইদানীং নরবুজিকে মুখপাত্র হিসেবে সামনে রাখতে হচ্ছে গুরুঙ্গকেও। তুলনায় কালিম্পঙের স্যামুয়েল গুরুঙ্গ বা আর বি ভুজেল উপদেষ্টা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হলেও নেতৃত্বে আসার অবস্থায় নেই, মনে করছে যুব নেতাদের একাংশ। তেমনই অম্রুত বা প্রিয়বর্ধনের বয়স কম বলে তাঁদের আপাতত বাদ রাখছেন পাহাড়ের অনেকেই।
ইদানীং বিনয়কে সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে জিটিএ সদস্য হিসেবে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তো আছেই, আরও রয়েছে মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় চার্জশিটের খাঁড়া। বিচার-পর্ব শুরু হলে গুরুঙ্গ, রোশনদের সঙ্গে তাঁকেও কলকাতায় গিয়ে থাকতে হবে। তখন প্রকাশ, নরবুজিদেরই হাল ধরে রাখতে হবে, মনে করেন মোর্চার বর্তমান নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy