Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
State employees General strike

স্কুলে ঢুকতে চেয়ে চিৎকার ছাত্রীদের, ‘আক্রান্ত’ শিক্ষিকারা

ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষিকারও ঢুকেছেন স্কুলে। যদিও প্রধান শিক্ষিকা সুতপা দাস এবং কয়েক জন শিক্ষিকা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

সুনীতিবালা সদর বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

সুনীতিবালা সদর বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ১০:৩৭
Share: Save:

ছাত্রীদের সমবেত চিৎকারে মুখরিত জলপাইগুড়ির করলা নদীর পাড়। নদীর পাড়েই সুনীতিবালা সদর বালিকা বিদ্যালয়। সে স্কুলের গেট আটকে পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে ডিএসও কর্মীরা। রাজ্য সরকার প্রাথমিক স্কুল বন্ধ করে দিতে চাইছে অভিযোগ তুলে এ দিন ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছিল এসইউসিআইয়ের ছাত্র সংগঠন ডিএসও। স্কুলের গেটও ছিল বন্ধ। ছাত্রীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এক সময়ে ছাত্রীরা চিৎকার করে— ‘‘কাকু, দরজা খোলো! আমরা স্কুলে ঢুকব।’’ ‘কাকু’ হলেন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, যিনি খানিক আগেই ছাত্রীদের সামনেই ছোট গেট দিয়ে স্কুলে ঢুকেছিলেন। ছাত্রীদের সমস্বর অনুরোধে এক সময়ে ‘কাকু’ গেট খুলে দিলেন। ধর্মঘট-সমর্থকদের পাশ কাটিয়ে হুড়মুড়িয়ে স্কুলে ঢুকে পড়ল ছাত্রীরা। অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী বলল, ‘‘স্কুলে এসে ফিরে যাব কেন! ক্লাস করব।’’

ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষিকারও ঢুকেছেন স্কুলে। যদিও প্রধান শিক্ষিকা সুতপা দাস এবং কয়েক জন শিক্ষিকা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই সময় তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সভাপতি অঞ্জন দাস স্কুলে এলে বাইরে দাঁড়ানো শিক্ষিকাদের সঙ্গে তাঁর এক প্রস্ত বচসা হয়। ছাত্রীরা ঢুকলেও প্রধান শিক্ষিকা কেন স্কুলে ঢুকছেন না, জানতে চান অঞ্জন দাস। তখন ধর্মঘটের সমর্থনে স্কুলের সামনে আসেন বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনের সদস্যেরাও। তাঁদের সঙ্গেও অঞ্জনের তর্কাতর্কি হয়। অঞ্জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলার কো-অর্ডিনেটরও। বচসার পরে, প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে ঢোকেন। ঢোকার আগে তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু অভিভাবকেরা মেয়েদের স্কুলে এনেছেন, এবং সে মেয়েরা স্কুলে ঢুকেছে, তাই ছাত্রীরা স্কুলে থাকবে।’’ তবে অভিভাবকদের একাংশের দাবি, কোনও শ্রেণিকে দু’টি, কোনও শ্রেণিতে তিনটি পিরিয়ড নেওয়া হয়েছে। ছুটি হয়েছে যথাসময়ে। পরে, জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় প্রধান শিক্ষিকা-সহ বামপন্থী শিক্ষক নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন অঞ্জন দাস। সে প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষিকার মন্তব্য, ‘‘মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। কিছু বলতে পারছি না।’’

কোচবিহারের দিনহাটা এক ব্লকের ছোট ফকিরতকেয়ায় এ দিন শিক্ষিকাদের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সকালে গীতালদহ হাইস্কুলে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঝামেলা হয়। পরে বিকেলে যখন স্কুল থেকে শিক্ষিকারা বাড়ি ফিরছিলেন সে সময় এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। দিনহাটা থানার পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। যদিও তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব অভিযোগ মানেননি।

কোচবিহারের গ্রাম-শহরে দু’রকম ছবি উঠে এসেছে। শহর এলাকার স্কুল খোলা থাকলেও, পড়ুয়া ছিল কম। গ্রামের দিকে বেশির ভাগ স্কুল খোলা ছিল। রান্না করা হয় মিড-ডে মিলও। ধর্মঘটের দিন স্কুলে ক্লাস নিয়েছেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায়। পার্থ কোচবিহারের একটি হাই স্কুলের শিক্ষক। অভিযোগ, সাংসদ ও একাধিক সরকারি পদে থাকার কারণে দীর্ঘদিন স্কুলে যান না পার্থ। বিরোধীদের কটাক্ষ, পার্থপ্রতিম দীর্ঘদিন স্কুলে না গেলেও, ধর্মঘটের দিন স্কুলে গিয়ে বিষয়টিকে ‘নাটকের পর্যায়ে’ নিয়ে গিয়েছেন। পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘আমি মাঝেমধ্যেই স্কুলে যাই। যাঁরা জানেন না, তাঁরা ভুল বকছেন।’’

আলিপুরদুয়ারে ফালাকাটা গার্লস হাই স্কুলেও এ দিন উত্তেজনা ছড়ায়। ধর্মঘট সমর্থনকারীরা স্কুল‌ বন্ধ করতে গেলে অভিভাবকেরা প্রতিবাদ করেন। শুরু হয় বচসা। প্রধান শিক্ষিকা শিপ্রা সাহারায় দেবকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকেরা। বচসা হয়েছে আলিপুরদুয়ার হাই স্কুলের গেটেও। ধর্মঘটের সমর্থকদের সঙ্গে বচসা হয় তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনুপ চক্রবর্তীর। অনুপ ওই স্কুলেরই শিক্ষাকর্মী। পরে স্কুল খোলে। ফালাকাটার একটি প্রাথমিক স্কুলে এক শিক্ষক কাজে যোগ দিতে গেলে, অন্য স্কুলের বন্‌ধ সমর্থনকারী এক শিক্ষক তাঁকে গালিগালাজ ও ধাক্কাধাক্কি করেন বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ির এক অভিভাবক অনিপ্রা ঘোষ বলেন, ‘‘করোনা-আবহে এত দিন পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে। এই ধর্মঘট থেকে স্কুলকে বাইরে রাখলেই ভাল হত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

State employees General strike North Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy