Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পূর্ণিমাতেই আঁধার দাস পরিবারে

বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সদ্যোজাত শিশুকন্যাটিকে দেখতে শনিবারই হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন আত্মীয়-স্বজন।

বালুরঘাট হাসপাতাল চত্বরে মৃত শিশুর পরিজনেরা। —ফাইল চিত্র

বালুরঘাট হাসপাতাল চত্বরে মৃত শিশুর পরিজনেরা। —ফাইল চিত্র

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৫৬
Share: Save:

কোজাগরীর ভোরে বাড়ির ছোট্ট ‘লক্ষ্মী’র এই পরিণতি হবে, ভাবতেই পারছে না দু’টি পরিবার।

বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সদ্যোজাত শিশুকন্যাটিকে দেখতে শনিবারই হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন আত্মীয়-স্বজন। আজ, সোমবার অর্পিতা দাস ও তাঁর কন্যাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে পূর্ণিমার ভোরেই অমাবস্যার অন্ধকার নেমে এল দুই পরিবারে। রবিবার সকালেও বাচ্চাটিকে দেখতে অর্পিতার শ্বশুর সুনীল দাস ও তাঁর পরিবারের কয়েকজন এসেছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে ঢুকতেই দুঃসংবাদটি পান তাঁরা। হাসপাতালেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়দের অনেকেই। গোটা ঘটনার পিছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই দায়ী বলে তাঁদের অভিযোগ।

সুনীল দাস অভিযোগ করেন, এ দিন ভোরে তাঁর বৌমার শয্যা থেকে ছোট্ট নাতনি পড়ে গিয়ে মারা গেল। অথচ ওয়ার্ডের নার্স ও আয়ারা কেউ দেখলেন না। তাঁর প্রশ্ন, তখন কোথায় ছিলেন কর্তব্যরত নার্স-আয়ারা। শিশুর মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের নিজেদের দাবিতে অনড়। তাঁদের বক্তব্য, শুয়ে থাকা অবস্থায় মায়ের দুধ খেতে গিয়ে শ্বাস আটকে শিশুটির মৃত্যু হয়। কোনও ফোনই ধরেননি হাসপাতালের সুপার বা ডেপুটি সুপার। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে জানান, তিনি ছুটিতে কলকাতায় রয়েছেন। শিশুটির ময়নাতদন্ত হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, শিশুটির শরীরে একাধিক জায়গায় আঘাত ও রক্তের দাগ মিলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, শ্বাস আটকে মৃত্যু হলে কীভাবে এইসব রক্তের দাগ হয় ওই বাচ্চার শরীরে। অভিযোগ, রাতে কর্তব্যরত নার্স ও আয়াদের গাফিলতির জেরেই বাচ্চাটি কোনওভাবে শয্যা থেকে মাটিতে পড়ে যায়। সেই আঘাতেই মৃত্যু। শিশুটির মা অর্পিতা জানান, তিনি ভোরের দিকে ঘুমিয়েছিলেন। কখন তাঁর বাচ্চা শয্যা থেকে মেঝেতে পড়ে যায়, তা তিনি টের পাননি। তিনি জানান, কিন্তু যাঁদের লক্ষ করার কথা ছিল, তাঁরা ঘুমিয়েছিলেন। দাস পরিবারের আরও সন্দেহ, সদ্যোজাতের আঙ্গুল কাটা কিংবা অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনার মতো এই ঘটনাও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কড়া নজরদারিতে রাখার পরেও এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে বালুরঘাট হাসপাতালে এক নার্সের গাফিলতিতে সদ্যোজাত শিশুর আঙ্গুল কাটা যায়। কয়েকমাস আগে প্রসব করাতে গিয়ে এক অন্তঃসত্ত্বার পেটে কিল চড় মারার অভিযোগ ওঠে সংশ্লিষ্ট নার্স ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। পরে অভিযুক্ত ওই চিকিৎসককে বালুরঘাট থেকে গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে বদলি করে তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গত মাসে বালুরঘাটের ডাঙা এলাকার এক অন্তঃসত্ত্বা বধূকে হাসপাতালের ওটিতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব করানোর পর তাঁর মৃত্যু হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Balurghat Hospital Newborn
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy