Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

যাতায়াতের রাস্তায় বাধা পেয়ে অন্য পথে হাতিরা

বন দফতর সূত্রের খবর, শাবকদের নিয়ে অচেনা রাস্তায় নেমে সমস্যায় পড়ে এ বার বারবার রুট বদল করছে হাতির দল। আবার তা দেখা মাত্রই রাস্তায় লোক, গাড়ি জমে যাওয়ায় বুনোদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে নানা বিভ্রান্তি।

পারাপার: কুয়াশা এবং উঁচু হাইওয়ে সামনে পড়ায় স্বাভাবিক পথ বদলে হাতি সড়কে। শিলিগুড়িতে। ফাইল চিত্র

পারাপার: কুয়াশা এবং উঁচু হাইওয়ে সামনে পড়ায় স্বাভাবিক পথ বদলে হাতি সড়কে। শিলিগুড়িতে। ফাইল চিত্র

কৌশিক চৌধুরী
নকশালবাড়ি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩
Share: Save:

শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়ি ব্লকের তরাই এলাকার হাতির পাল পড়েছে মুশকিলে। গত বছর শীতের মরসুমে এশিয়ান হাইওয়ে-২ চালু না থাকায় নিজেদের করিডরের নির্দিষ্ট রুট মেনে ‘সিঙ্গল লেনে’র ৩১-সি জাতীয় সড়ক পার করত হাতির দল। তার পরে জঙ্গল, ধানখেত, বনবস্তি, চা বাগানে যাতায়াত চলত দিনরাত। চা বাগানের ভিতরেও তৈরি হয়ে গিয়েছিল, হাতিদের জন্য নির্দিষ্ট রাস্তা। সেখানে রাখা হত না চা গাছ এবং শেডট্রি। কিন্তু এশিয়ান হাইওয়ে পুরোপুরি চালু হতেই বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। শীতের হালকা কুয়াশা ঢাকা সকালে বা সন্ধ্যায় মাটি থেকে উঁচু চারলেনের রাস্তা, কিছু অংশে রাস্তার দু’পাশে থাকা নিকাশি নালা পার করতে গিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে হাতির দল।

বন দফতর সূত্রের খবর, শাবকদের নিয়ে অচেনা রাস্তায় নেমে সমস্যায় পড়ে এ বার বারবার রুট বদল করছে হাতির দল। আবার তা দেখা মাত্রই রাস্তায় লোক, গাড়ি জমে যাওয়ায় বুনোদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে নানা বিভ্রান্তি। সম্প্রতি গাড়ির ধাক্কায় একটি হাতির শাবকের পা পর্যন্ত ভেঙেছে। তরাই-এর ওই এলাকায় বেশির ভাগ হাতির দলগুলি দলকা জঙ্গলে থাকে। জাতীয় সড়ক পার করে কিরণচন্দ্র চা বাগান হয়ে পাহাড়গুমিয়া চা বাগান, চেঙ্গা নদী হয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা ধরে ঘোরে। কিরণচন্দ্র চা বাগানের ৩, ১১ নম্বর সেকশন দিয়ে ঢুকে ১৫, ১৩ নম্বর সেকশন দিয়ে হাতিরা বার হত। ওই এলাকাই ‘হাতির করিডর’ হিসাবে গত তিন দশকে পরিচিত হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু এ বার, দলকা জঙ্গল থেকে বার হয়ে সুবিধা মত চওড়া এশিয়ান হাইওয়ে পার হতে গিয়ে কিরণচন্দ্র চা বাগানের যেখানে সেখানে ঢুকে পড়ছে হাতির দল। আর তাতে ক্ষতির মুখে পড়ছে চা বাগান কর্তৃপক্ষ। হাইওয়ের হাতির করিডরে একেবারে সামনে থাকা ৮০০ একরের কিরণচন্দ্র চা বাগানে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ একরের প্ল্যান্টেশন। তরাইয়ের কিরণচন্দ্র চা বাগান প্রায় দেড়শো বছরের পুরানো। এ দিন সন্ধ্যায় কিরণচন্দ্র চা বাগানের ম্যানেজারের অফিসে হামলা চালায় একটি দলছুট দাঁতাল। অফিসের ফেন্সিং ভেঙে ফেলে। গ্রিল ভাঙার চেষ্টা করে। লোকজন কোনওমতে হাতিটিকে তাড়ায়। সেই সময় ম্যানেজার সহ সবাই দফতরে কাজ করছিলেন।

বাগানের ম্যানেজার প্রত্যুষ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এতদিন তো আমরা ওদের রাস্তা চিনতাম। সেখানে গাছ লাগানো হত না। কিন্তু এশিয়ান হাইওয়ে হতেই ওরা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। উঁচু চওড়া রাস্তা, শাবকদের নিকাশি নালা পার করানো-সব মিলিয়ে যেখানে সুবিধা পাচ্ছে, সেখানে চলে যাচ্ছে। আর ক্ষতির মুখে পড়ছি আমরা। চা গাছ, শেডট্রি, ফেন্সিং রোজ উপড়ে দিচ্ছে।’’ তিনি জানান, বন দফতরকে বলেছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে।

ভারত-নেপাল সীমান্তের নকশালবাড়ি এলাকার বিভিন্ন জঙ্গলে হাতির পাল সারা বছর থাকে। শীতে কালো নুনিয়া, ধান, ভুট্টা, হাড়িয়া, কচি সুপুরি গাছের লোভে অন্য এলাকা থেকে আরও দল এসে জড়ো হওয়ায় সংখ্যা বাড়ে।

বর্তমানে ১৫০টির মতো হাতি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ওই এলাকায় আছে। কিরণচন্দ্র, পাহাড়গুমিয়া ছাড়াও মেরিভিউ, অটল, ত্রিহানা, জাবরা, নকশালবাড়ি, গঙ্গারাম, বেলগাছির মতো চা বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে দলগুলি। তাতে কমবেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রত্যেক বাগান কর্তৃপক্ষ। এদিনই গঙ্গারাম চা বাগানে দিনভর হাতির পাল দাপিয়ে বেড়িয়েছে।

বন দফতরের সুকনা ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের বনাধিকারিক জয়ন্ত মন্ডল বলেন, ‘‘স্থানীয় রেঞ্জ ছাড়াও আমরা হাতির দলগুলির উপর সবসময় নজর রাখছি। ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো, রুট ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Naxalbari Fog
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy