গজরাজ: চাঞ্চল্য পানিট্যাঙ্কির খড়িবাড়ি এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
গত কয়েক বছর ধরে এলাকায় সে ‘গণেশ’ নামে পরিচিত। শীত পড়তেই দলবল নিয়ে ঢুকে পড়ে গ্রামে। অলিগলি, রাস্তাঘাট সব চেনা। সদলবল এলাকায় ঢুকলেও অন্য সঙ্গীদের থেকে কিছুটা আলাদা গণেশ। বাকিরা রাত বা ভোরের আলোয় চা বাগান, জঙ্গলের বাইরে বনবস্তিতে এদিক ওদিক ঘুরলেও গণেশ একাই ঘুরে বেড়ায় লোকালয়ে। সারা বছর কমবেশি তার দেখা মিললেও শীতের সময় গণেশের দেখা মেলে ঘনঘন। বিরক্ত না করলে খুব একটা অনিষ্ট করে না। তবে ধানখেত বা ভুট্টাখেত দেখতে লোভ সামলাতে পারে না সে, বলছেন এলাকাবাসীরাই।
শীত পড়তেই বৃহস্পতিবার ভোরে গণেশের আবার দেখা মিলল খড়িবাড়ি ব্লকের পানিট্যাঙ্কির গ্রামে, দুধগেট-মদনজোত গ্রামে। এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৭টা অবধি গ্রামের রাস্তায় হেলেদুলে ঘুরে বেড়ায় গণেশ। গ্রামবাসীরা অনেকে এগিয়ে গিয়ে তার ছবি, ভিডিও তুলতে থাকেন। যদিও তাতে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ ছিল না গণেশের। ঘণ্টাখানেক ঘোরাফেরার পর রোদের তেজ বাড়তেই ছায়া খুঁজতে শুরু করে গণেশ। পানিট্যাঙ্কি লাগোয়া এলাকার একটি ধানখেতে অবশেষে সে ঢুকে পড়ে ধান খেতে। ততক্ষণে খবর পৌঁছয় বন দফতরের কাছে। বনকর্মীরা পৌঁছে তাড়া করে গণেশকে নকশালবাড়ির টুকুরিয়াঝাড় জঙ্গলে ঢুকিয়ে দেন। বনকর্মীদের কথায়, ‘‘উত্তেজিত না হলেও এলাকা ছেড়ে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। আমাদের দেখে মনে হয় বাধ্য হয়েই জঙ্গলে ঢুকল।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, এরই মধ্যে গণেশের সঙ্গীরা একদল উত্তমছাট থেকে টুকুরিয়াঝাড় হয়ে বুড়াগঞ্জের দিকে চলে যায়। আরেকদল কলাবাড়ির দিক থেকে তারাবড়ি, কিলারামজোতের দিকে যায়। দীর্ঘক্ষণ প্রায় ৩০টি হাতির দলটিকে নকশালবাড়ি চা বাগানে শেড ট্রি-র ছায়ায় আরাম করতেও দেখা যায়। শেষে আরেকটি দল কিরণচন্দ্র চা বাগান, হাতিঘিসার দিক থেকে বার হয়ে পানিঘাটার জঙ্গলের দিকে যায়। কিছুক্ষণ পরে হাতির দলকে এশিয়ান হাইওয়ে-২ এলাকায় দেখা যায়। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে হেমন্তের সকালে প্রথমবার এলাকার বিভিন্ন অংশে হাতির দল দেখে বাসিন্দাদের মধ্যে আলোড়ন পড়ে যায়।
অল্পবয়সী অনেকেই বাইকে, স্কুটিতে ঘুরে ঘুরে হাতির দলের ছবি তুলতে থাকেন। পানিট্যাঙ্কি এলাকার বাসিন্দা শ্রদ্ধা সুব্বা, মদনজোতের কিরণ ছেত্রী, জাবরা এলাকার রঞ্জন রাই-র জানান, ভারত-নেপাল সীমান্ত বরাবর বিভিন্ন জঙ্গলে হাতির পাল সারা বছর কমবেশি থাকে। শীতকালে নানা দিক থেকে হাতির সংখ্যা বাড়ে। কয়েকটি এলাকায় তো দীর্ঘদিন ধরে আসার সুবাদে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ওই গমেশ নামের হাতিটাও তেমনই। দলের বেশিরভাগ সুযোগ পেলে অবশ্য ফসল শেষ করে দিয়ে পালায়। আর শীতে কালো নুনিয়া, ভুট্টার লোভ দল ছাড়তে পারে না। নতুন লোভ, সুপারি গাছ ভেঙে খাওয়া।
বনকর্মীরা জানাচ্ছেন, তরাই-এর কলাবাড়ি, দলকা, পানিঘাটা, টুকুরিয়াঝাড়-উত্তমছাটের মতো জঙ্গলে সব মিলিয়ে এখন ২০০-এর মতো হাতি রয়েছে। প্রতিদিনই সকাল থেকে প্রথমে জঙ্গল, চা বাগান ঘোরাঘুরি আর বিকালের পর সন্ধ্যা নামতেই বিভিন্ন এলাকায় দল বেঁধে ঢুকছে হাতির পাল। বন দফতরের টুকুরিয়াঝাড়ের বনাধিকারিক তোপদেন শেরিং ভুটিয়া বলেন, ‘‘ধান উঠতেই এদের আনাগোনা বাড়ে। আর এর মধ্যে একটি একা বেশি ঘুরে বেড়ায়। এদিন সেটির দেখা মিলেছে। তবে কারও ক্ষতি করেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy