চ্যাংরাবান্ধা
করোনার কারণে এ বছর নানা রকম সমস্যা দেখা দিলেও আমাদের মতো মৃৎশিল্পীদের পেশায় সমস্যা বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা দিয়েছে। সে কারণে নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর এই পেশায় আসছেন না। তবে এ কথা ঠিক যে করোনা পরিস্থিতিতে সমস্যা অনেকটাই বেড়েছে।
আগে সারা বছর ধরেই বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি তৈরির বরাত পেয়েছি। এ বছর অনেক পুজো বন্ধ। আর্থিক কারণে পুজোর বাজেট কমার ফলে মূর্তি বাবদও খরচ কমেছে পুজো উদ্যোক্তাদের। এক সময় ৩০-৪০ হাজার টাকা দামের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করলেও এ বছর প্রতিমা সবই ১৫-৩০ হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করতে হয়েছে। বিশ্বকর্মা পুজোর সময় অনেক মূর্তি তৈরি করলেও বেশ কিছু মূর্তি অবিক্রিত থেকেছে। তবে লাভ কমলেও আমি পূর্বপুরুষদের পেশা আঁকড়েই বাকি জীবন কাটাতে চাই। তাই এই ৫৫ বছর বয়সেও আমার বিশ্রাম নেই। সারা বছর ধরেই কম বেশি মূর্তি তৈরি করছি।
আগে ১৫-২০টি দুর্গা প্রতিমার অর্ডার পেলেও এ বছর মেখলিগঞ্জ ও চ্যাংরাবান্ধা মিলিয়ে ১১টি দুর্গা প্রতিমা তৈরির বরাত পেয়েছি। এই কাজে সাহায্য করার জন্য প্রতি বছর আলাদা করে লোক রাখলেও এ বছর করোনার কারণে বাইরে থেকে লোক আনতে পারিনি। এ ছাড়া মাঝে মধ্যেই ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় বাড়তি কাজের চাপ রয়েছে। মাটি থেকে শুরু করে খড়, দড়ি ও প্রতিমা তৈরির অন্য উপকরণের দাম যেমন অনেকটাই বেড়েছে। তেমনই গাড়ি ভাড়াও বেড়েছে। ফলে লাভের পরিমাণ এক ধাক্কায় অনেকটা কমেছে।
আমাদের আদি বাড়ি তুফানগঞ্জে। আমার বাবা প্রয়াত রাধেশ্যাম পালও মৃৎশিল্পী ছিলেন। বাবার কাছেই আমার মা ও আমরা ছয় ভাই বোন মূর্তি গড়া শিখি। আগে বাড়ির সকলে মিলে মূর্তি তৈরির কাজে নেমে পড়তাম। পরে বিভিন্ন কারণে অনেকেই আলাদা জায়গায় বসবাস শুরু করলেও পেশা হিসেবে সকলেই মূর্তি তৈরির সঙ্গেই যুক্ত আছি। চ্যাংরাবান্ধার বিডিও অফিস সংলগ্ন এলাকায় আমার বাড়ি এবং বাড়িতেই আমার কুমোরটুলি। সেখানেই স্ত্রী ঝর্না পাল ও ছেলে মান্টি পালকে নিয়ে মূর্তি গড়ছি। আমার মেয়ে পায়েল মূর্তি তৈরি করতে পারলেও সম্প্রতি তাঁর বিয়ে হয়েছে।
প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িত থাকায় পেশার প্রতি আলাদা একটা টান রয়েছে। সে কারণে যত দিন শরীর চলবে হাজার সমস্যাতেই এই পেশাকেই আঁকড়ে বাঁচব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy