কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। —ফাইল চিত্র।
রাঙাপানির স্টেশনমাস্টার যে ‘কাগুজে অনুমতি’ দিয়েছিলেন, তাতে কোনও ভুল ছিল না। বরং নিয়ম-নির্দেশ মেনেই কাঞ্চনজঙ্ঘা ও মালগাড়ির চালককে ‘অনুমতিপত্র’ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করলেন কাটিহারের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার। ঘটনার পর রেল মালগাড়ির চালকের দিকে আঙুল তুললেও রেলকর্মীদের একাংশ স্টেশনমাস্টারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁদের ‘যুক্তি’ ছিল, স্টেশনমাস্টারও ‘ভুল অনুমতিপত্র’ দিয়েছিলেন! তা-ও তদন্তের আওতায় আনার দাবি তোলা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে স্টেশনমাস্টারকে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
মালগাড়ির গতিবেগ নিয়ে প্রথম থেকেই নানাবিধ প্রশ্ন উঠেছে। কারও দাবি, মালগাড়িটির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। আবার কারও দাবি, গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার। মালগাড়ির গতিবেগ বেশি থাকার জন্যই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে বুধবার জানিয়েছিলেন ডিআরএম। এর পর বৃহস্পতিবার রেল যৌথ পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে দেখা গেল, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও মালগাড়িকে ‘টিএ ৯১২’ ও ‘টি৩৬৯(৩বি)’ ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। ‘টিএ ৯১২’ ফর্মে গতিবেগ সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ না থাকলেও টি৩৬৯(৩বি)’ ফর্মে তা ছিল। বলা ছিল, ট্রেনের গতিবেগ যাতে কোনও ভাবেই ১৫ কিলোমিটারের বেশি না হয়। কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করে দ্রুত গতিতে মালগাড়ি চালানো হয়েছিল বলে দাবি করে মালগাড়ির চালক, সহকারী চালক ও গার্ডকে দায়ী করা হয়েছে যৌথ পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে। কিন্তু এর সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি এনজেপির ‘চিফ লোকো ইনস্পেক্টর’ (সিএলআই) ওমপ্রকাশ শর্মা। পর্যবেক্ষণ রিপোর্টেই তাঁর মত উল্লেখ করা হয়েছে। ওমপ্রকাশের মত, যে হেতু ভোর ৫টা ৫০ মিনিট থেকে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা বিকল হয়ে ছিল, তাই এ ক্ষেত্রে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে ‘টি/এ ৯১২’ ফর্ম দেওয়া উচিতই হয়নি। উচিত ছিল ‘টি/ডি ৯১২’ ফর্ম দেওয়া। অর্থাৎ, প্রকারান্তরে স্টেশনমাস্টারের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন ওমপ্রকাশ। ঘটনাচক্রে, এর পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে ডিআরএম দাবি করলেন, ‘‘নির্দেশ অনুযায়ী যে ফর্মে অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন, তা-ই দেওয়া হয়েছে। আলাদা আলাদা ফর্মের আলাদা আলাদা মানে রয়েছে। তদন্ত চলাকালীন এগুলো বলা সম্ভব নয়।’’
ঘটনার পর তদন্ত শুরু করেছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য সুরক্ষা কমিশনার (সিসিআরএস)। তাঁর প্রতিনিধি হিসাবেই শিলিগুড়ির এডিআরএম অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন সুরেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘যখন কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তখন সঠিক তথ্য পেতে অসুবিধা হয়। প্রাথমিক তদন্তের উপর বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। মালগাড়ির গতিবেগ, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গতিবেগ সব কিছুই তদন্ত কমিটির কাছে রেকর্ড হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা জনসমক্ষে নিয়ে আসা উচিত হবে না।’’ সুরেন্দ্র জানান, এখনও পর্যন্ত ৩০ জনকে ডাকা হয়েছে। তার মধ্যে ১৬ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। ট্রেন দুর্ঘটনার পর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই কারণে আলিপুরদুয়ারের রেল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কর্তাদেরও তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে বলে জানান ডিআরএম।
মালগাড়ির সহ-চালক মনু কুমারকে বৃহস্পতিবার সকালে বেসরকারি হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন তাঁর মা দ্রৌপদী দেবী। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত ছেলের দেখা পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘ভগবান বাঁচিয়েছে ওকে। কেমন করে বেঁচে রয়েছে, তা আমরা জানি না। কিন্তু আমার ছেলে দোষী না। এটা আমি জানি। যতই অভিযোগ দায়ের করা হোক না কেন।’’ মনু সম্পর্কে ডিআরএম বলেছেন, ‘‘এখনও উনি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওঁর বয়ান রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। তবে আগের চেয়ে সুস্থ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy