প্রতীকী ছবি।
সালটা ২০০৯ কিংবা ২০১০ হবে। মহাষ্টমীর সন্ধ্যা। তখনও দশ-পনেরোটি জামা ও প্যান্টের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। দোকানের সামনে ক্রেতাদের লাইন। দোকানের দুই কর্মী কাজ সেরে পুজো দেখতে বার হয়ে গিয়েছেন। দোকানের সামনে আমার দুই মেয়ে ও স্ত্রী অপেক্ষা করছেন আমার জন্য। অথচ আমার কাজই শেষ হচ্ছে না। শেষে রাত ১০টা নাগাদ সব কাজ সেরে পরিবারের সঙ্গে পুজো দেখতে বার হতে পেরেছিলাম।
আজ এই ঘটনা মনে হয়, সে কোন জন্মের কথা! ৪৫ বছর ধরে দর্জির কাজ করছি। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে রেডিমেড পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। একসময়ে বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে দম ফেলার ফুসরত মিলত না। এখন শপিং মল, পোশাকের দোকান বা অনলাইনের মাধ্যমে অনেকেই জামাকাপড় কিনছেন। ফলে কাপড় কিনে জামা-প্যান্ট বানানোর আগ্রহ কমে গিয়েছে। দর্জির পেশার সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছেন।
কেনই বা আমাদের কাছে আসবে মানুষ? কাপড় কিনে জামা-প্যান্ট বানানোর মধ্যে অনেক ঝক্কি। তার থেকে রেডিমেড কাপড় সহজে পাওয়া যায়। এখন অনলাইন স্টোরগুলিতে বড় রকমের ছাড় দেয়। বড় বড় ব্র্যান্ডের পোশাক পাওয়া যায় সেখানে। সে সব যদি ঘরে বসে ঝক্কি ছাড়া মেলে, তা হলে আমাদের লোকে পুছবে কেন?
গত বছর থেকে করোনা অতিমারি শুরু হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। অতিমারিতে লোকে ঘরবন্দি থাকতে শিখেছে, লোকের ছোঁয়া এড়িয়ে দূরত্ব বজায় রাখতে শিখেছে। ফলে অনলাইন নির্ভরতা বেড়েছে। কমেছে দর্জিদের চাহিদা।
কিন্তু একটা কথা আমরা হলফ করে বলতে পারি, আমাদের পোশাক অনেক বেশি টেকসই। আমরা উপকরণ কিনে আনি ভাল জায়গা থেকে। এখন সুতো, চেন, পেস্টিং, বোতাম, হুক ও সেলাইয়ের কাপড়ের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। সেলাই মেশিন মেরামতির খরচ ও দোকানের কর্মীদের মজুরি বেড়েছে। কিন্ত গত তিন বছর ধরে জামা তৈরির মজুরি ২২০ টাকা, প্যান্ট তৈরির ৩১০ টাকা। এই পরিস্থিতিতে কাপড় কিনে দর্জি দিয়ে পোশাক বানালে অনেক সময়ে খরচ পড়ে বেশি। তাই ক্রেতা ধরে রাখতে দর্জিরা পোশাক বানানোর মজুরি বাড়ানোর সাহস পাচ্ছেন না। জানি না ভবিষ্যতে কোনও দিন দর্জিদের ভাল সময় ফিরবে কি না।
অনুলিখন: গৌর আচার্য
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy