দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সোমবার শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
দলের নেতা ও প্রাক্তন কাউন্সিলরদের নিয়ে সরকারি ভাবে পুর পরিষেবার হাল খতিয়ে দেখতে আসরে নেমে বিতর্কের মুখে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সোমবার সকালে শিলিগুড়িতে এমনই ঘটেছে। মন্ত্রী শিলিগুড়ি পুরসভার সচিবকে নিয়ে হিলকার্ট রোড ও সেবক রোডের সমস্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন ব্যবসায়ীদের। ওই সময়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের জেলা কমিটির একাধিক নেতা, প্রাক্তন কাউন্সিলরদের। যাঁদের কয়েকজন ব্যবসায়ীদের নির্দেশ, পরামর্শও দিয়েছেন বলে অভিযোগ। ফলে, সরকারি পরিদর্শনের সময়ে ওই তৃণমূল নেতারা কী করে থাকলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শহরে।
এমনকী, আগামী বছরের গোড়ায় পুরভোট হবে ভেবেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচয় করাতে মন্ত্রী সরকারি পদমর্যাদা ব্যবহার করছেন কি না সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলের নেতাদের অনেকেই। ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, মন্ত্রী সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে পরামর্শ, নির্দেশ দিতেই পারেন। কিন্তু, দলের নেতা-প্রাক্তন কাউন্সিলরদের নিয়ে মন্ত্রী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পরিদর্শন করতে পারেন না বলে ব্যবসায়ীদের অনেকেই মনে করেন। তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর যুক্তি, “কেউ ওখানে দলের পতাকা নিয়ে যাননি। সকলে সাধারণ শহরবাসী হিসেবে গিয়েছিলেন। এতে অসুবিধে কোথায়? সকলেই তো শহরকে ভালবাসেন। সহরের উন্নয়ন চান।”
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তাঁরা গৌতমবাবুর এদিনের অভিযানে ধন্দে পড়েছেন। হিলকার্ট রোড ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অশোক অগ্রবালও গৌতমবাবুর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “সরকার থেকে যদি ফুটপাত দখল মুক্ত করার ব্যবস্থা হয় তাহলে তার চেয়ে ভাল কিছু হয় না। কিন্তু কোনও দলের লোকজন গেলে মানুষের মনে সন্দেহ জাগাটা স্বাভাবিক। তাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।”
এই দিন সকালে অন্তত ৫০ জনকে মন্ত্রী পরিদর্শনে বার হন। বিভিন্ন জায়গায় গেলেও সরকারি লোক বলতে মন্ত্রী এবং পুর সচিব সপ্তর্ষি নাগ। বাকিরা সকলেই তৃণমূল দলের বিভিন্ন পদাধিকারীরা। এদিন গৌতমবাবুর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নান্টু পাল, জেলা কমিটির সদস্য, কৃষ্ণ পাল, সংগ্রাম সিংহ মিত্র, মিলন দত্ত, যুব তৃণমূলের মনোজ ভার্মা, আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি অরূপরতন ঘোষ, জয়ন্ত মৌলিক, সঞ্জয় পাঠক, রঞ্জন সরকার, বিমান বল, বিষ্ণু সাহা সহ অনেকেই। সরকারি কাজে গিয়েছেন মন্ত্রী। সেখানে তৃণমূলের এত নেতা কেন? এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুর সচিব সপ্তর্ষি নাগ। তিনি বলেন, “আমাকে মন্ত্রী থাকতে বলেছিলেন, তাই আমি ছিলাম। ওখানে গিয়েই বাকিদের দেখি। এর বেশি আমার জানা নেই।”
এদিন সকাল সাড়ে ৯ টা নাগাদ হাসমিচক থেকে হাঁটা শুরু করেন মন্ত্রী। মহানন্দা সেতু পর্যন্ত হিলকার্ট রোড ধরে হাঁটেন তিনি। রাস্তার দু’পাশের ফুটপাত দখল করে দোকানের জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন সচিবকে। কয়েকটি দোকানের ব্যবসায়ীদেরও বলেন, সরিয়ে না নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সচিবকে এ বিষয়ে দ্রুত একটি নোটিশ করার নির্দেশ দেন তিনি। তিনি বলেন, “গ্যাংটকের এম জি মার্গের মত শহরের ফুটপাথকে বাধাহীন করে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া নিয়েছি। তা তৈরিতে সময় লাগলেও তা কার্যকর করা হবে।”
যদিও এভাবে দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে অভিযান চালানোর অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সুবীন ভৌমিক বলেন, “এভাবে সরকারি কাজে দলের লোকদের নিয়ে যাওয়া যায় নাকি? উনি সরকারি কাজের আড়ালে আসলে রাজনীতি করছেন। দলের লোক ডেকে লোকবল দেখানোর চেষ্টা করছেন।” দার্জিলিং জেলা বিজেপির সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলেন, “তৃণমূল জেলা সভাপতি হিসেবে গৌতম দেব ওঁর দলের সকলকে নিয়ে চলুন। তাতে ওঁর দলের লোকজনও খুশি হবেন। কিন্তু, সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে পরিদর্শনে গিয়ে কোথাও গেলে দলের নেতাদের নেওয়া উচিত নয়। সরকার ও দলের সীমারেখা গুলিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। তা হলে মানুষ ভাবতেই পারেন, সরকারি পদমর্যাদা ব্যবহার করে দলের নেতাদের পরিচয় করানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সাংবিধানিক কাঠামোকেই নষ্ট করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএমের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকার। তাঁর অভিযোগ, “শুধু গৌতম দেব নন, রাজ্য জুড়েই তৃণমূল এই কাজ করছে। দলীয় লোকদের দিয়ে সরকারি কাজ করাচ্ছেন। আবার পুলিশকে দিয়ে দলীয় কাজ করাচ্ছেন। পুরো প্রক্রিয়াটাকেই ঘেঁটে দিচ্ছেন। একটা অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করতে চাইছেন।” এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রাস্তায় নেমে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ বসু। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল দাদাগিরির পথে নেমেছে। এমনভাবে চলতে থাকলে আমরা চুপ করে থাকব না। রামঘাটের ঘটনায় যেভাবে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলাম, সেভাবেই পথে নামব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy