Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

স্ত্রীর লক্ষ্মীর ভাঁড়ই সংসারের সহায়

আলিপুরদুয়ারের শামুকতলার পটটোলা গ্রামের শিবু ঘোষ পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। গ্রামে ঘুরে ঘুরে সুপারি কিনে এনে আড়তদারের কাছে বিক্রি করে যা আয়, তা দিয়ে কোনও মতে সংসার চলে। সামান্য পুঁজির ব্যবসা।

শেষ পর্যন্ত ভাঙতে হল লক্ষ্মীর ভাঁড়ও। নিজস্ব চিত্র।

শেষ পর্যন্ত ভাঙতে হল লক্ষ্মীর ভাঁড়ও। নিজস্ব চিত্র।

রাজু সাহা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

আলিপুরদুয়ারের শামুকতলার পটটোলা গ্রামের শিবু ঘোষ পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। গ্রামে ঘুরে ঘুরে সুপারি কিনে এনে আড়তদারের কাছে বিক্রি করে যা আয়, তা দিয়ে কোনও মতে সংসার চলে। সামান্য পুঁজির ব্যবসা। ৫০০ ও হাজারের নোট বাতিল হওয়ার পরে পুঁজির প্রায় সব টাকাই ব্যাঙ্কে জমা করে দিতে হয়েছে। তারপরে গত ১০ দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ। ব্যাঙ্কে সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়ে এক দিন পাঁচশো তো এক দিন এক হাজার মিলেছে। সে টাকা মুদির দোকানের ধার আর সংসারের এটা সেটা কিনতে ফুরিয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, ব্যাঙ্কের টাকা তুলে খরচ করলে ব্যবসার পুঁজিই তো ফুরিয়ে যাবে। এখন শেষ ভরসা স্ত্রী নীলিমাদেবীর মাটির ভাঁড়ে জমিয়ে রাখা খুচরো পয়সা। শুক্রবার সেই ভাঁড় ভেঙে খুচরো পয়সা দিয়ে চাল আটা তেল নুন সব্জি কিনে এনেছেন।

শুধু শিবুবাবু নন। শামুককতলা ও কুমারগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামে ঘরে ঘরে এখন এই ছবি।

কুমারগ্রামের অনন্ত দাস পেশায় দিন মজুর। তিনি জানালেন, মাঠে ধান কাটার কাজ চলছিল। খুচরো টাকার অভাবে সাত দিন ধরে সেটাও বন্ধ। তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের কাজ করি, তাঁরা বলেছেন ব্যাঙ্ক থেকে বেশি টাকা দেওয়া শুরু হলে ধান কাটা শুরু হবে। মুদির দোকানে আর ধারে জিনিস দিতে চাইছে না।’’ তিনিও জানান, তাঁর স্ত্রী মাটির ভাঁড়ে খুচরো পয়সা জমিয়েছিলেন। সেই ভাঁড় ভেঙে ওই খুচরো পয়সা দিয়ে গতকাল চাল, তেল, নুন, সব্জি কিনেছেন। ব্যাঙ্কেও কোনও টাকা নেই। চিকলিগুড়ির আমিনা বিবি, সুখেন দে, মহাকালগুড়ির সত্তম দেবনাথের মুখেও একই কথা শোনা গেল।

বাজারে খুচরোর আমদানি দেখে ব্যবসায়ীরাও সেটা টের পাচ্ছেন। শুক্রবার শামুকতলায় সাপ্তাহিক হাট বসে। হাটের মুদি ব্যবসায়ী সঞ্জয় সূত্রধর জানালেন, আগে খুচরো পয়সার অভাবে দোকানদারিতে সমস্যা হত। তিনি বলেন, ‘‘আজ অনেক খদ্দের শুধু খুচরো পয়সা দিয়ে জিনিসের দাম মিটিয়েছেন। সেটা যে ভাঁড়ে জমানো খুচরো পয়সা বুঝতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।’’

তুরতুরি গ্রামের বধূ সবিতা রায় বললেন, ‘‘স্বামী আমাকে ছেড়ে অন্যত্র সংসার পেতেছেন। দুই সন্তান নিয়ে অভাবের সংসার। দিন মজুরি করি। কাজ করে মজুরির টাকা মেলেনি। সারা বছর মাটির ভাঁড়ে পয়সা জমাই সেটা দিয়ে লক্ষ্মীপূজা করি। সংসারের খরচে টান পড়েছে। তাই সেই ভাঁড়ের টাকা দিয়ে চাল আটা কিনলাম।’’

আলিপুরদুয়ার ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গায়ত্রী জানান, পাঁচশো ও হাজারের নোট বাতিল হওয়ায় দরিদ্র মানুষেরা চরম সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর দুশ্চিন্তা, ‘‘লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে খুচরো পয়সা দিয়ে তো আর বেশি দিন সংসার টানা যাবে না। ধান কাটা বন্ধ। কৃষি শ্রমিকরা খুব অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy