হায় কী হল রে, ও কী করব রে, কী করি উপায়/ চাষবাস লাটে উঠল, বীজ কেনার পয়সা নাই...।
পৌষের ঝলমলে সোনালি দিনে খাঁ খাঁ করছে জমি। নোট-সমস্যায় জেরবার চাষিদের সেই হাহাকারের ছবিই ফুটে উঠছে গম্ভীরার সুরে সুরে। ধান কেটে নেওয়ার পরে মালদহে আলু বোনার আর জমিই তৈরি হয়নি। মাঠজুড়ে পড়ে রয়েছে গাছের গোড়াগুলি। জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে সেই আকালের কাহিনি গানে ভর করে পৌঁছে গিয়েছে রাজধানীর সরস মেলা বা বিশ্ববঙ্গ উৎসবের অলিন্দেও। গত সপ্তাহে মধূসুদন মঞ্চে মালদহের কুতুবপুর গম্ভীরা দলের শিল্পীদের গলায় বাজল সেই দুরবস্থারই সুর।
প্রায় হাজার বছর ধরে প্রচলিত মালদহের এই গম্ভীরা আদিতে শিবকথা ছিল। এখন এই লোকনাট্য আশপাশে ঘটে চলা নানা ঘটনা, অন্যায়-অবিচারের কথা অকপটে তুলে ধরে। মানুষের মনকে নাড়া দিতে সঙ্গে থাকে ব্যঙ্গ নৃত্য ও হাস্যরসও। সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম বা কামদুনি থেকে লগ্নি সংস্থার ফাঁদের সমকালীন ঘটনা কোনও কিছুই বাদ পড়ে না শিল্পীর ভাবনা থেকে।
গত বছর এই সময়ে মালদহের এই জমিগুলি থেকে ভেসে বেড়াত কাঁচা মাটির গন্ধ। ধান কেটে নেওয়ার পর আলু চাষের জন্য তৈরি করে রাখা হতো সেই জমি। কিন্তু এ বার খোলা পড়ে রয়েছে ক্ষতবিক্ষত জমি। আলু চাষের কোনও আশা নেই। কারণ হাতে টাকা নেই। ৮ নভেম্বরের রাত থেকে নোট অচল হতে সমাজের বিভিন্ন স্তরে যে কঠিন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, গম্ভীরা শিল্পীরা স্বভাবতই তা থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারেননি।
শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় তিন পুরুষ ধরে সমকালীন ঘটনাবলী নিয়ে গম্ভীরা গান লেখা ও পরিচালনার কাজ করে চলেছেন প্রশান্ত শেঠ। পেশায় তিনি একটি সমবায় ব্যাঙ্কের মিনি ডিপোজিট এজেন্ট। তিনি বললেন, ‘‘এক জন গম্ভীরা শিল্পী হয়ে আমি তো এই সঙ্কটে চুপ করে বসে থাকতে পারি না। নোট হেনস্থা নিয়ে গান বেঁধে ফেলেছি। মহড়া দিয়ে সেই গান বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশনও শুরু হয়েছে। চাষি, একটি দোকানের কর্মী ও উচিত বক্তা—মূলত এই তিনটি চরিত্রের মাধ্যমে আমরা আমাদের কথা বলছি।’’
কী বলছে চরিত্রগুলি? প্রশান্তবাবুর চিত্রনাট্যে চাষির মুখে সংলাপ, ‘‘বুঝলি কিনা, হামার দু’বিঘা জমি আছে। ওইটা চাষবাস কইরা বউ-বেটি লইয়ে কোনও রকমে চলেছি। এই যে নোট বাতিলের ধাক্কায় কুপোকাত হলাম। বিনিময়ে ধান কাটতে পারলেও ধান বেইচতে পারছি না, দাম নাই। আলু চাষের জমিও তৈরি করতে পারলাম না। এই অবস্থা চলতে থাকলে সংসার ভাইস্যা যাবে।’’
আবার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কায়দা করে লাভও করে নিচ্ছেন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কর্মীরা। এ সব দেখে প্রশান্তবাবুর নাটকে উচিত বক্তা বলেন, ‘‘কালো নোট উদ্ধারের ধাক্কায়, জীবন গেল একশো প্রায়। কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ, চালুনে জল ভরার মতন। কালো টাকা গাদা গাদা, পার্টি ফান্ডে দিলেই সাদা। লাঠি ভাঙবে না, সাপও মরবে না। এই অভিনব কায়দায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy