নদীপাড়ে টেনে আনা হচ্ছে কাটা মাথাটি। —নিজস্ব চিত্র।
দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল কয়েক জন পড়ুয়া। পথেই পড়ে সংকোশ নদী। সেই নদীর পাড় ধরে হাঁটার সময় কটু গন্ধ আসে নাকে। ইতিউতি চাইতেই ওরা দেখে, সংকোশের ঘোলা জলে ভাসছে হাতির কাটা মুন্ডু! শুক্রবার বিকেলে আলিপুরদুয়ারের ভল্কা বারবিশা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব শালবাড়ি কাঁঠালতলার এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ওই স্কুলপড়ুয়াদের ডাকাডাকিতেই ছুটে আসেন স্থানীয়েরা। খবর দেওয়া হয় বন দফতরকেও। বনকর্মীদের অনুমান, হাতির কাটা মাথাটি অসম থেকে ভেসে এসেছে।
সংকোশের চরে হাতির কাটা মুণ্ড আটকে রয়েছে— স্থানীয়দের কাছ থেকে এই খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে আসেন বনকর্মীরা। পৌঁছন ভল্কা ও কুমারগ্রাম রেঞ্জের অফিসারেরাও। ১০-১২ জন বনকর্মী মোটা দড়ি আর পলিথিন নিয়ে নদীর চরে যান। প্রথমে কাটা মাথাটি টেনেহিঁচড়ে, ঠেলে নদীর কিনারে এনে কালো পলিথিন দিয়ে মুড়ে ফেলেন বনকর্মীরা। তার পর সেটিকে মোটা দড়ি দিয়ে ভাল ভাবে বেঁধে টেনে টেনে সংকোশ নদীর উঁচু পারবাঁধের উপর তুলে আনা হয়। পরে সেটিকে বারবিশা বিট অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। কাটা মাথা উদ্ধারের সময় নদীরে পাড়ে ভিড় জমিয়েছিলেন স্থানীয়েরা। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘হাতির কাটা মাথার কাছে যেতেই তীব্র দুর্গন্ধ লেগেছিল নাকে। খুব কাছে থেকে দেখেছি, দুটো দাঁত ছিল না। একদম চোয়ালের গোড়া থেকে কাটা ছিল। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে, হাতিটিকে কয়েক দিন আগেই মারা হয়েছে। দাঁত দু’টি কেটে নিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে সংকোশ নদীতে।’’
ভল্কা ও কুমারগ্রাম রেঞ্জের আশপাশের জঙ্গলে হাতিটির শরীরের বাকি অংশের জন্য তল্লাশি অভিযানও চালান বনকর্মীরা। কিন্তু তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে খবর বন দফতর সূত্রে। বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকার্তা অপূর্ব সেন বলেন, ‘‘সংকোশ নদী থেকে একটি বয়স্ক হাতির কাটা মাথা উদ্ধার করা হয়েছে। পাশেই অসম। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, সেটি অসম থেকে ভেসে আসতে পারে। আমরা ভল্কা এবং কুমারগ্রাম রেঞ্জ-সহ আশপাশের জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু পাইনি। বাকি বিষয় ময়নাতদন্তের পরেই জানা যাবে।’’ ব্যাঘ্র প্রকল্পের (পূর্ব) অধিকর্তা দেবাশিস শর্মার উপস্থিতিতে শিলবাংলোর পিছনে জঙ্গল ঘেরা ফাঁকা জায়গায় কাটা মাথার ময়নাতদন্ত হয়। দেবাশিস বলেন, ‘‘হাতিটির দাঁত দুটো নেই। শুধু মাথাটা পাওয়া গিয়েছে। দেহ এখনও পাওয়া যায়নি।’’
এলাকাবাসীদের একাংশের দাবি, লম্বা সাদা দাঁতের জন্য হাতিটিকে গুলি করে মেরে দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন চোরাশিকারিরা। এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে ধবধবে সাদা লম্বা দাঁতের জন্যই হাতিটিকে গুলি করে মেরে ফেলেছে চোরাশিকারিরা। দাঁত তুলে নেওয়ার পর হাতির দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে সংকোশ নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছে। কোনও ভাবে মাথাটি নদীর চরে হাঁটুজলে আটকে যায়। এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া উচিত। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে কঠিন সাজা দেওয়া হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy