অরবিন্দ ঘোষের শেষ যাত্রায় সম্মান জানাচ্ছেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন শিলিগুড়ি পুরসভার নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ওরফে অমু ঘোষ (৫৮)। রবিবার ভোর চারটে নাগাদ তিনি তাঁর বঙ্কিমচন্দ্র রোডের বড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে কলেজ পাড়ার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সকালেই সে খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শোকও ছায়া বিস্তার করে শিলিগুড়িতে।
তাঁর সমর্থনেই শিলিগুড়িতে বর্তমানে পুরবোর্ড গড়ে বামেরা। ৪৭ আসনের পুরসভাতে তাঁকে নিয়ে বামেরা ছিল ২৪ জন। এক বাম কাউন্সিলর আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এ বার অরবিন্দবাবু মারা যাওয়ায় পুরবোর্ডে বামেরা দাঁড়াল ২২ জনে। তৃণমূল ১৮, কংগ্রেস ৪ এবং বিজেপি'র ২টি আসন রয়েছে।
কিন্তু ভিতরে ভিতরে যতই অঙ্ক কষা হোক, অমুবাবুর মৃত্যুতে রবিবার শোকাচ্ছন্ন শহর পুরসভার সেই হিসেব নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি হয়নি। বারবার উঠে এসেছে অমুদার কথাই। বিধানসভা ভোটের আগে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গেলে তাঁর ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিন বার নির্দল প্রার্থী হিসাবেই ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন। প্রথম জেতেন ১৯৯৯ সালে। এক সময় নকশাল আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে গৌতম দেবের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। পরে তৃণমূল ছাড়েন।
ভোরে খবর ছড়িয়ে পড়তেই দলমত নির্বিশেষে মানুষ ভিড় করতে শুরু করেছিলেন প্রয়াত কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষের বাড়িতে। ভোরেই সাতটা নাগাদ বঙ্কিম চন্দ্র রোড়ে প্রয়াত কাউন্সিলরের বাড়িতে পৌঁছন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। কিছুক্ষণ পরেই মেয়র পারিষদ মুকুল সেনগুপ্ত, জয় চক্রবর্তী, পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ সিংহ, সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকাররা। ওয়ার্ড কমিটির লোকজন, পড়শি, পরিচিতদের ভিড় ক্রমেই বাড়তে থাকে।
মেয়র প্রয়াত কাউন্সিলরের পরিবার-পরিজনদের সমবেদনা জানিয়ে ঘন্টাখানেক কাটিয়ে যান। পুরসভায় অরবিন্দবাবুর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করেন। বেলা ৯ টা নাগাদ অরবিন্দবাবুর বাড়িতে পৌঁছন পর্যটন মন্ত্রী। ততক্ষণে মৃতদেহ দোতলার ঘর থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে বাড়ির পাশের উঠোনে। একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের লোকেরা মন্ত্রপাঠ করেন। তাতে যোগ দেন পরিবরের লোকেরা, পরিচিতেরা অনেকেই। পর্যটন মন্ত্রী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সেই থেকে মৃতদেহ দাহ করা পর্যন্ত শ্মশানেই ছিলেন তিনি। সঙ্গে থেকেছেন বিরোধী দলনেতা, দলের কাউন্সিলর, যুবনেতাদের অনেকেই। সঙ্গেই তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজনীতিতে এসে পরিচিয় নয়, ওঁর সঙ্গে তরুণ বয়স থেকেই সখ্যতা রয়েছে। আজ, একজন ভাল বন্ধুকে হারালাম।’’
সশ্রদ্ধ প্রণাম গৌতম দেবের।
গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ভাল বন্ধু হারালাম।’’ মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘অমুবাবুর মৃত্যুতে এই পুরবোর্ডের জন্য নয়, শিলিগুড়িরই বড় লোকসান হল। তিনি মূল্যবোধের রাজনীতি বিশ্বাস করতেন। যখন বিভিন্ন প্রলোভনে অনেকে অবস্থান বদলেছেন, তখন তিনি নিজের আদর্শে অবিচল থেকেছেন।’’
অমুদার শেষকৃত্যে দলমত নির্বিশেষে মানুষ এসেছেন। মন্ত্রী গৌতম দেব, বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল, কৃষ্ণ পাল-সহ তাঁদের দলের কাউন্সিলররা। গাছ তলায় বসে ছিলেন তাঁরা। কাছেই ছিলেন মেয়র অশোকবাবু, সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার, মেয়র পারিষদ, তাঁদের দলের কাউন্সিলররা। ছিলেন কংগ্রেস নেতা সুবীন ভৌমিক, তাঁদের কাউন্সিলররা, বিজেপি-র কাউন্সিলরেরা। সিপিআইএম লিবারেশনের জেলার নেতা থেকে, শহরের কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা, শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে চেনা পরিচিত প্রচুর মানুষ।
বেলা ১০ টার পর বাড়ি থেকে শবযাত্রা শুরু হয়। উদয়ন সমিতির মাঠে খোলা ট্রাকের উপর সাদা কাপড় বিছিয়ে মৃতদেহ রাখা ছিল। শবযাত্রা শুরু হলে হেঁটে, বাইকে অংশ নেন অনেকে। প্রথমে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি আড্ডা দিতেন, সেই মিষ্টির দোকানে।
তার পরে স্বামীজি ক্লাব, ফেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাব হয়ে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় স্বামীজি স্মরণিতে অরবিন্দবাবুর পৈতৃক বাড়িতে। ওই বাড়িতেই ওয়ার্ড অফিস। সেখান থেকে যাওয়া হয় পুরসভায়। মেয়র, মেয়র পারিষদ, বিভিন্ন দলের কাউন্সিলর, পুরকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান। তারপর দলমত নির্বিশেষে মেয়র, মন্ত্রী সহ বহু মানুষ শ্মশান পর্যন্ত শবযাত্রায় অংশ নেন।
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy