মাটি খুড়ে দেহ উদ্ধার। প্রতীকী চিত্র।
কোথায় গেলেন ‘সৎ মা’— বেশ কিছু দিন ধরেই পড়শিরা এই প্রশ্ন করছিলেন দুই বোনকে। পড়শিদের বক্তব্য, বোনেরা কাউকে জানিয়েছিল— মা অসুস্থ। কাউকে বলেছিল— ‘বাইরে গিয়েছেন’। তিন সপ্তাহ মহিলাকে দেখতে না পেয়ে পুলিশে খবর দিয়েছিলেন পড়শিরা। শুক্রবার পুলিশ এসে বাড়ির উঠোনের মাটি খুঁড়ে মহিলার দেহ উদ্ধার করেছে। পুলিশের কাছে এক মেয়ের দাবি, দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পরেই মারা গিয়েছেন তিনি এবং,তাঁর দেহ তারা বাড়ির উঠোন-চত্বরেই ‘কবর’ দিয়েছে। পুলিশের প্রশ্ন, তা-ই যদি হবে, তা হলে সে কথা ‘গোপন’ করা হল কেন? ঘটনাটি জলপাইগুড়ি পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের জমিদার পাড়ার।
এ দিন পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় প্রায় সাড়ে ছ’ফুট গর্ত খুঁড়ে পচাগলা দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, মৃতার নাম লক্ষ্মী মাঝি (৫৫)। পড়শিদের অভিযোগ, ওই মহিলাকে মারধর করা হত এবং শেকল দিয়ে বেঁধে রাখত মেয়ে পিঙ্কি মাঝি। গ্রামবাসীর অভিযোগ, খুন করে দেহ মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। সূত্রের খবর, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পিঙ্কিও তাদের কাছে স্বীকার করেছে মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে রাখার কথা।
প্রায় সাত বছর আগে, প্রথম স্ত্রী থাকাকালীনই পিঙ্কির বাবা অশোক মাঝি লক্ষ্মী নামের ওই মহিলাকে বিয়ে করেন বলে সূত্রের দাবি। কয়েক মাস বাদে, অসুস্থ হয়ে অশোকের প্রথম স্ত্রী মারা যান। তার কয়েক মাস পরে, অশোকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এর পর থেকে অশোকের প্রথম পক্ষের তিন মেয়ে জমিদার পাড়ায় ‘সৎ মা’কে নিয়ে থাকতেন। কিছু দিন বাদে এক মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। আরও দুই মেয়ে পিঙ্কি ও রিঙ্কি লক্ষ্মী মাঝির সঙ্গে এক বাড়িতেই থাকতেন। পিঙ্কি রাজমিস্ত্রির কাজের শ্রমিক ও রিঙ্কি কাপড়ের দোকানের কর্মী। পড়শিদের অভিযোগ, লক্ষ্মীকে মারধর করতেন দুই মেয়ে। পড়শিরা চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ পেতেন। কয়েক দিন ধরে মহিলাকে দেখা যাচ্ছিল না। এরই মধ্যে দুর্গন্ধ ছড়াতেই গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়। অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কোতোয়ালি থানায় পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে পিঙ্কি কোনও কিছুই স্বীকার করতে চাননি। পরে তাদের জানান, গত ১২ মে ‘সৎ মা’ মারা যান এবং উঠোনের মাটিতে গর্ত করে তাঁর দেহ পুঁতে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ গর্ত খুঁড়ে মহিলার দেহ উদ্ধার করে ময়না-তন্তের জন্য পুলিশ মর্গে পাঠায়।
প্রতিবেশী চিরঞ্জিৎ সরকারের দাবি, ‘‘পিঙ্কি মারধর করত সৎ মাকে। আমাদের সন্দেহ, খুন করে মায়ের দেহ মাটিতে পুঁতে রেখেছিল।’’ স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তথা পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বেণুরঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘পিঙ্কির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই কারণে ওই বাড়িতে কেউ যেত না। এ দিন দুর্গন্ধ ছড়ানোয় ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে।’’
পিঙ্কি অবশ্য দাবি করেছেন, রোগভোগেই সৎ মায়ের মৃত্যু হয় এবং তার পরে দেহ মাটিতে পুঁতে দিয়েছেন। পুলিশ সুপার উমেশ খাণ্ডবহালে বলেন, ‘‘এক নিখোঁজ মহিলার মৃতদেহ গর্ত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না-তদন্তের পরে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এক মহিলাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy