জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে সোমবার সন্ধ্যায় যখন দার্জিলিং মেল পৌঁছয় তখন প্ল্যাটফর্ম ভিড়ে ঠাসা।
ট্রেন তখন চলতে শুরু করে দিয়েছে। প্রায় দৌড়ে এসে এক বৃদ্ধ ট্রেনের কামরায় ওঠার সিঁড়িতে হাত রাখলেন। একটা মৃদু গুঞ্জন উঠল প্ল্যাটফর্মে থাকা ভিড় থেকে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে ওই বৃদ্ধের। অস্ফুট স্বরে তিনি ভিড়ের উদ্দেশে বললেন, “প্রণাম করলাম, দার্জিলিং মেলকে প্রণাম করলাম। এই জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকেই মা-বাবার সঙ্গে দার্জিলিং মেলে উঠতাম। রংপুর-পার্বতীপুর হয়ে ট্রেনে কলকাতা যেতাম। এই ট্রেনের সঙ্গে আর স্টেশনের সঙ্গে আমার মা-বাবার স্মৃতিও আছে।” এক সময়ে দার্জিলিং মেল জলপাইগুড়ি-হলদিবাড়ি হয়ে বাংলদেশের ভিতর দিয়ে যেত। সে ট্রেনের কামরা আর নেই। সে পথও এখনও খোলা নেই। কিন্তু হলদিবাড়ি-জলপাইগুড়ি স্টেশনের স্মৃতি রয়ে গিয়েছে। সে স্মৃতির টানেই দার্জিলিং মেলের আধুনিক কোচে হাত ছুঁযে প্রণাম করেছেন অশীতিপর সমর ঘোষ। জলপাইগুড়ির নতুন পাড়ার বাসিন্দা।
সোমবার, স্বাধীনতা দিবসের সকালে প্রথম যাত্রী নিয়ে এনজেপি ছাড়িয়ে জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন হয়ে হলদিবাড়ি পৌঁছয় দার্জিলিং মেল। এত দিন এনজেপি থেকেই চলাচল করত ট্রেন। সোমবার থেকে হলদিবাড়ি থেকে চলাচল শুরু করেছে। সোমবার সকালেই জলপাইগুড়ি-হলদিবাড়ি দুই স্টেশনে ভিড় করেছিলেন অনেক প্রবীণ। ছোটবেলার স্মৃতি ফিরে পেতে। রেলের তরফে অনুষ্ঠান ছিল বিকেলে। সকালের আবেগের সঙ্গে সন্ধের অনুষ্ঠানে মিশে গেল ট্রেনের কৃতিত্ব দাবি-করা রাজনীতিও।
জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে সোমবার সন্ধ্যায় যখন দার্জিলিং মেল পৌঁছয় তখন প্ল্যাটফর্ম ভিড়ে ঠাসা। হলদিবাড়ি থেকে দার্জিলিং মেলকে সবুজ পতাকা দেখিয়ে সে ট্রেনে চেপেই জলপাইগুড়ি আসেন বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়, জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামীরা। প্ল্যাটফর্মে প্রায় গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির সমর্থকেরা। দু’পক্ষই দার্জিলিং মেলকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন, আবার ট্রেনের কৃতিত্ব দাবি করে তরজা চলছে দু’পক্ষের। তৃণমূল স্লোগানে দাবি করছে, তাদের আন্দোলনের চাপেই রেল মন্ত্রক দার্জিলিং মেল হলদিবাড়ি থেকে চালাল। বিজেপির পাল্টা প্রশ্ন, যখন তৃণমূলের হাতে রেল মন্ত্রক ছিল, তখন কেন দার্জিলিং মেল হলদিবাড়ি থেকে চলল না?
স্টেশনে দাঁড়িয়ে জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা লাগাতার আন্দোলন করেছি, টাউন স্টেশনকে শ্মশান বলেছি। তার জেরেই দার্জিলিং মেল হলদিবাড়ি-জলপাইগুড়ি থেকে চালাতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র। হলদিবাড়ি থেকে দিল্লিগামী ট্রেন চাই, তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস ফেরত চাই।” অন্য দিকে, বিজেপি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর মন্তব্য, “তৃণমূলের কৃতিত্বের দাবি শুনে শিশুও হাসবে। বিজেপি সরকারই দার্জিলিং মেলকে স্মৃতির পথে ফিরিয়ে দিয়েছে। এর পরে, আরও একাধিক ট্রেন হলদিবাড়ি থেকে চলবে। একটা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসও আমরা পাব বলে আশা করি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy