ম্যালের চারপাশে ঘোড়ায় চড়ে এ দিনও ঘুরেছেন পর্যটকেরা। এ দিনও চৌরাস্তায় বসে থাকা পর্যটকদের হাতে কফির কাপ দিয়ে গিয়েছেন হকাররা। কেভেন্টার্স বা গ্লেনারিজ এ দিনও সরগরম ছিল। হকার্স কর্ণারে শীতের পোশাক কেনার, কাঠের সরঞ্জাম কেনার লম্বা লাইনও চোখে পড়েছে। বাস স্ট্যান্ড, ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এ দিনও ছিল টিকিট কেনার লম্বা লাইন। এক কথায়, অন্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও চেনা ছন্দে ছিল দার্জিলিং শহর। বনধের ডাকে সাড়া দেয়নি শৈলশহর। এ দিনের বনধকে বিজেপিও সমর্থন করে সামিল হয়েছিল। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বিজেপির জোটসঙ্গী হওয়ায় বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙের জনজীবন বিপর্যস্ত হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কাও করেছিলেন। যদিও, বনধ সমর্থন বা বিরোধিতা কোনটাই মোর্চার তরফে জানানো হয়নি। মোর্চার কোনও নেতাকে এ দিন শহরের রাস্তাতেও চোখে পড়েনি। মোর্চার এক নেতার কথায়, বনধ সমর্থন করবেন কিনা তা সাধারণ বাসিন্দাদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতে অবশ্য বাসিন্দারা সাড়া দেননি।
সবে গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুম শুরু হয়েছে দার্জিলিঙে। শহরের ছোট বড় সব হোটেলই ভিড়ে ঠাসা। ভূমিকম্পের আতঙ্কে কয়েকদিন আগে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। অনেকে হোটেল ছেড়ে চলেও গিয়েছিলেন। যদিও, ট্যুর অপারেটরদের দাবি, আবার চেনা ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে দার্জিলিং। সেই ছন্দ ব্যহত করতে পারেনি এ দিনের বনধও। সরকারি সব অফিসই এ দিন খোলা ছিল। তবে ভূমিকম্পের কারমে স্কুলগুলিতে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক দোকান বন্ধের দিন থাকা বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকান বন্ধ ছিল। তার বাইরে অন্য দিনের মতো এ দিনও জমজমাট ছিল দার্জিলিং। ম্যাল, চৌরাস্তা, এইচ ডি লামা রোড, টিভি টাওয়ার রোডে পর্যটকদের দেখা গিয়েছে। চৌরাস্তার মুক্তমঞ্চের সিঁড়িতে বসে আড্ডাতেও মেতে উঠেছেন পর্যটকেরা। কলকাতা থেকে দার্জিলিঙে আসা পর্যটক এ দিন ম্যালে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘ধর্মঘট যে হচ্ছে তার কোনও মালুমই পাওয়া গেল না দার্জিলিঙে। হোটেলে টিভিতে দেখলাম নানা জায়গায় বনধ হচ্ছে। অথচ দার্জিলিঙে সবই স্বাভাবিক। টাইগার হিল দেখতে যাওয়া থেকে গাড়ি ভাড়া পাওয়া কোনও কিছুতেই সমস্যা হয়নি।’’
শহরের লাদেনলা রোডের একটি হোটেলের ম্যানেজার রাজেশ রজক বলেন, ‘‘আমরা পর্যটকদের আগেই আশ্বস্ত করেছিলাম। ওঁরাও ভরসা রেখেছিলেন। কোনও বুকিং বাতিল হয়নি। শহর স্বাভাবিক থাকায় পর্যটকদের চাহিদা মতো পরিষেবা দিতে আমাদেরও সমস্যা হয়নি।’’
কী ভাবে বনধ এড়াল দার্জিলিং?
পাহাড়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, অন্য ধর্মঘটেও ক্ষেত্রেও দার্জিলিঙে কোনও প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক কালে শুধুমাত্র মোর্চা এবং পাহাড়ের কয়েকটি স্থানীয় দল বনধ ডাকলেই তার প্রভাব পড়েছে। এ দিন জোটসঙ্গীর ডাকা বনধে অবশ্য নিষ্ক্রিয়ই ছিল মোর্চা। দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ চলতি মাসের শুরুতেই মোর্চার তরফে পাহাড়ে কোনও বনধ হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। সে কারণে পার্শ্ব শিক্ষক নিয়োগ করা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরোধিতায় গিয়ে বনধ ডাকলেও, শেষে বিষয়টি ‘আদালতের বিচারাধীন’ বলে দাবি করে বনধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল মোর্চা। তবে এক্ষেত্রে জোটসঙ্গী বিজেপি বনধ ডাকায় প্রকাশ্যে বিরোধিতা করা বা সমর্থনের কোনটাই করেনি মোর্চা।
তবে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বা বাধ্যবাধ্যকতা যাই থাকুক না কেন, বনধে দার্জিলিং স্বাভাবিক থাকায় খুশি পর্যটক থেকে বাসিন্দা সকলেই। পর্যটকরা অবশ্য এর কৃতিত্ব বাসিন্দাদেরই দিয়েছেন। সমতল থেকে যাওয়া এক পর্যটকের কথায়, ‘‘আমরাও যদি নিজেদের শহরে এভাবে বনধ উপেক্ষা করতে পারতাম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy