Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সিপিএমের কার্যালয় ভাঙচুর, জখম বামকর্মী

ভোটের ফল বেরোনোর পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক হানাহানি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির শাসক দলের প্রতি। বামেদের দাবি, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আসনে জেরা পর থেকেই মারমুখী হয়ে উঠেছে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা। তবে তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০২:১৭
Share: Save:

ভোটের ফল বেরোনোর পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক হানাহানি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির শাসক দলের প্রতি। বামেদের দাবি, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আসনে জেরা পর থেকেই মারমুখী হয়ে উঠেছে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা। তবে তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মালবাজার

মালবাজার বিধানসভার ক্রান্তি , রাজাডাঙা এলাকাতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধের পর থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক হামলা, ভাঙচুর, ঢিল ছোড়ার অভিযোগ তুলেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। ক্রান্তি বাজারে থাকা কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে চেয়ার ও বেঞ্চ ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। মালবাজার ব্লক গ্রামীণ এলাকার সভাপতি স্বাধীন সাহা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘সন্ধের পর তৃণমূলীরা দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়।’’ রাজাডাঙা এলাকায় মহম্মদ করিমুল নামে সিপিএম কর্মীর দোকানঘরও ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে। মালবাজার সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক মিন্টু রায়ের বাড়িও রাজাডাঙাতে। তাঁর বাড়িতেও ঢিল ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মিন্টু। মেটেলির বিধাননগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও ডাঙাপাড়ার সিপিএমের কার্যালয়ে ঢিল ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। তাতে পার্বতী বর্মন নামে এক মহিলা সমর্থক জখমও হন বলে অভিযোগ। তবে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কমিটির সদস্য পঞ্চানন রায় বলেন, ‘‘কংগ্রেস এবং সিপিএমের নেতারা পরাজয়ের পর চার দিকে হামলার ভূত দেখতে শুরু করেছেন। কোথাও কোনও তৃণমূল সমর্থক হামলা চালাননি।’’

কোচবিহার

জেলা জুড়েই সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে গরু, ছাগল লুঠ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বিরোধী দলের সমর্থক হওয়ায় মাথাভাঙা পুরসভার কয়েক জন কর্মীকে কান ধরে ওঠবোস করানোর অভিযোগ উঠেছে। বাদ যায়নি ছিটমহলও। দিনহাটা বিধানসভার সাবেক ছিটমহল এলাকায় দু’টি বাড়িতে তৃণমূল সমর্থকেরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। এক জনকে মারধর করা হয়েছে। কোচবিহারের শীতলখুচিতে সিপিএমের প্রার্থী নমদীপ্তি অধিকারীর বাড়িতে শুক্রবার সকালে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুরের দাবি, এ দিন সকালে তাঁর বাড়িতে পরপর ঢিল পড়ে। সিতাইয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিএম এবং কংগ্রেস পার্টি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। দিনহাটা গীতালদহ, ওকরাবড়িতে নাজুরহাটে সিপিএম এবং মাতালহাটে কংগ্রেসের পার্টি অফিসেও হামলা হয়। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “জেলা জুড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস চলছে। বেশ কিছু কর্মী সমর্থক ইতিমধ্যে দলের দফতরে আশ্রয় নিয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের বিষয়টি জানান হয়েছে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে।”

হিলি, তপন

হিলির পাঞ্জুল এলাকার চাকুরপাই গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে আরএসপির এক কর্মীর বাড়িতে তৃণমূল সমর্থকরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সত্য সিংহ নামে আরএসপি কর্মীকে বাঁশ দিয়ে মারা হয়েছে বলে দাবি। জখম ওই কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তপনেও আরএসপি কর্মীদের ওপরে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ।

জলপাইগুড়ি

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া সাতকুড়া এলাকার কংগ্রেস পার্টি অফিসে তৃণমূল সমর্থকেরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, শুক্রবার সকালে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেয়। পার্টি অফিসের দরজায় তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। অফিস খুললে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি। এ দিন বিকেলে কংগ্রেস ও বাম নেতারা পার্টি অফিস খোলাতে সাতকুড়া গিয়েছেন।

মালদহ

মালদহ শহরে সিপিএমের পার্টি অফিসে হামলার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। তিনটি মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাম কর্মীরা। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ দু’পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

ইসলামপুর

কংগ্রেসের অভিযোগ, এ দিন সকাল থেকেই চোপড়ার সুজালি এলাকাতে গন্ডগোল করে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা। ব্যাপক লুঠ চালায় বলে অভিযোগ। চোপড়ার দাসপাড়াতে একটি পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। পরে অবশ্য পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। কংগ্রেসের ইসলামপুর ব্লক সভাপতি জাকির হুসেন বলেন, ‘‘সুজালি এলাকায় জোটকে সমর্থন করায় এলাকায় হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়াও চোপড়ায় মাজিয়ালি কংগ্রেসের পার্টি অফিসও দখল করেছে।’’ সিপিএম চোপড়ার জোনাল সম্পাদক আনারুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমাদের এক কর্মীর বাগান বন্ধ করে দিয়েছে, কারও চা পাতা সহ গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সুজালি সহ বেশ কিছু গ্রামে লুঠ চালাচ্ছে তারা।’’ যদিও বিষয়টি ভিত্তিহীন বলেই দাবি সদ্য জয়ী তৃণমূল বিধায়ক হামিদূল রহমান। তিনি বলেন, ‘‘ওরা মিথ্যে অভিযোগ করছে।’’ ইসলামপুরের এসডিপিও বৈভব তেওয়ারি বলেন, ‘‘দাসপাড়ায় পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE