Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

বুনো আলু, কচু খেয়েই খিদে মিটছে ওঁদের

আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের টটপাড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় থাকেন ১৫টি পরিবারের ৫৫ জন আদিবাসী। এর মধ্যে ২০টি শিশু। তাদেরও মুখেও তুলে দিতে হচ্ছে বুনো কচু-আলু সেদ্ধ।

ক্ষুধা-নিবারণ: পাতে শুধু বুনো আলু সেদ্ধ। এটাই আদিবাসী পরিবারটির দুপুরের খাবার। আলিপুরদুয়ারের টটপাড়ায়।  ছবি: রাজু সাহা

ক্ষুধা-নিবারণ: পাতে শুধু বুনো আলু সেদ্ধ। এটাই আদিবাসী পরিবারটির দুপুরের খাবার। আলিপুরদুয়ারের টটপাড়ায়। ছবি: রাজু সাহা

রাজু সাহা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৫:২৩
Share: Save:

অসহনীয় দারিদ্র আর অপুষ্টির সঙ্গে সারা বছর জুড়েই এঁদের বাস। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে অর্ধাহারে, কখনও অনাহারেই কাটছে ওঁদের। সারা বছর কোনওরকমে একবেলা ভাতের জোগাড় হয়ে যেত কখনও মাটি কেটে, কখনও কারও বাড়িতে বাঁশের বেড়া তৈরি করে। লকডাউনে এখন সেই আয়ের পথ বন্ধ। কিন্তু পেট তো মানে না! তাই আশপাশের জঙ্গল থেকে খুঁজে আনা বুনো আলু এবং কচু সেদ্ধ করে খেয়ে কোনওমতে টিকে আছেন ওঁরা।

আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের টটপাড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় থাকেন ১৫টি পরিবারের ৫৫ জন আদিবাসী। এর মধ্যে ২০টি শিশু। তাদেরও মুখেও তুলে দিতে হচ্ছে বুনো কচু-আলু সেদ্ধ। এখন পর্যন্ত কোনও সাহায্য পাননি ওই অসহায় আদিবাসী দরিদ্র মানুষগুলি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? এলাকার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য অসীম সরকারের কাছে গিয়েছিলেন তাঁরা। অসীম তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করে আলিপুরদুয়ার বিধানসভা এলাকার টটপাড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানান।

লক্ষ্মীরাম মুর্মু, রমেশ মারাণ্ডি, মঙ্গল হেমব্রমরা জানালেন, তাঁদের কারও নিজস্ব ঘর নেই। আসলে তাঁরা সবাই নমনি অসমের বাসিন্দা। অসমে গোষ্ঠী সংঘর্ষের শিকার হয়ে ১৫ বছর আগে ভিটেমাটি ছেড়ে টটপাড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এসে আশ্রয় নেন। প্রথমে রেল স্টেশনের পরিত্যক্ত ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা। রেল কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে পরে তাঁরা মজিখানা, টটপাড়া, হাড়িভাঙ্গা-সহ চার-পাঁচটি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আশ্র‍য় নেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের জমিতে ত্রিপল টাঙিয়ে অথবা কারও পরিত্যক্ত বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকেন ওঁরা। গত ১৫ বছর ধরে এভাবেই স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয়ে বসবাস করছেন। ওঁদের সকলেরই জীবিকা দিনমজুরি। মূলত মাটি কাটা, জ্বালানির কাঠ কাটা, বাঁশের বেড়া দেওয়া অথবা মাটির ঘর তৈরি করার কাজ করেন এঁরা। লকডাউনের পর কেউই কাজ পাচ্ছেন না।

ওঁরা যে দেশের নাগরিক সেই প্রমাণও ওঁদের কাছে নেই। প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য অসীম জানালেন, ওঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বসবাস করলেও ওঁদের কারও রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড কিছুই নেই। এলাকার ভোটারও নন তাঁরা। তাই সরকারি কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না ওঁরা। এর ফলে করুণ অবস্থার মধ্যে দিন কাটছে ১৫টি আদিবাসী পরিবারের। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন লকডাউনে রাজ্যের কোনও মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকেন। এর পরেও এঁরা আলু-কচু সেদ্ধ খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন, সেটা খুবই দুঃখজনক।’’

স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ ভট্টের তাঁর পুরনো বাড়িতে তিনটে আদিবাসী পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন। একই ভাবে দীপক মজুমদারের বাড়িতে রয়েছে একটি পরিবার। গণেশ বলেন, ‘‘আমার বাড়িটা পড়েই রয়েছে। ওঁদের থাকতে দিয়েছি। ওঁরাই বাড়িটা দেখেশুনে রাখেন। ওঁদের অসহায় অবস্থার কথা শুনে খুব খারাপ লাগল। সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করব।’’

হাড়িভাঙ্গা গ্রামে কাজল দেবনাথের জমিতে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে ঘর তুলে থাকেন লক্ষ্মীরাম মারাণ্ডি ও তাঁর স্ত্রী ফুলিন টুডু। তাঁদের দুই ছেলে। তাঁরা জানালেন, অসমে তাঁদের ঘরবাড়ি চাষের জমি, বাঁশবাগান ছিল। সব ছেড়ে নিঃস্ব হয়ে এখানে এসে অন্যের আশ্রয়ে দিনমজুরি করে কোনও মতে দিন কাটাচ্ছিলেন। লকডাউন তাঁদের জীবন ওলটপালট করে দিয়েছে বলে তাঁদের হতাশ মন্তব্য। বললেন, এভাবে অর্ধাহারে অনাহারে বুনো আলু ও কচু খেয়ে তাঁরা বাচ্চাদের নিয়ে কতদিন বেঁচে থাকতে পারবেন জানেন না।

টটপড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রিয়াঙ্কা দাস বলেন, ‘‘অসম থেকে আসা ওই আদিবাসী পরিবারগুলির কথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য অসীম সরকারের থেকে জেনেছি। ওঁদের পাশে আছি। ওঁদের হাতে দ্রুত ত্রাণ দেব। ওঁদের ভোটার, আধার ও রেশন কার্ড না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তবু ওঁদের সাহায্যে উদ্যোগী হব।’’

আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি শীলা দাস সরকার শনিবার বলেন, ‘‘এই জেলায় কেউ অভুক্ত নেই। যাঁদের ঘরে খাবার নেই, তাঁদের ঘরে আমরা খাবার পৌছে দিচ্ছি। তাঁরা যে রাজ্যেরই বাসিন্দা হোক। তাঁদের খাবারের কোনও সমস্যা থাকবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy