ছবি এএফপি
ওঁদের বাড়ি বহুদূর। মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ এলাকার এক প্রত্যন্ত গ্রামে। সেখান থেকে এতটা পথ উজিয়ে বংশপরম্পরায় পরিবার নিয়ে জলপাইগুড়ি আসেন ওঁরা। এখানে সোনা-রূপোর গুঁড়ো খুঁজে দিয়ে যা রোজগার হয় তার থেকেই টাকা পাঠান গ্রামের বাড়িতেও। লকডাউনে দু’মাস ধরে কাজ বন্ধ, রোজগারও শূন্য। এতদিন অপেক্ষার পরে সেই লোকগুলিই জলপাইগুড়ি ছেড়ে ফিরে যেতে চাইছে নিজেদের গ্রামে। সোমবার জলপাইগুড়ি পুরসভায় গিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য দরখাস্ত জমা করে এসেছেন ওই ১৭টি পরিবার।
কী কাজ করেন ওঁরা? ভোরবেলায় সোনার দোকানের সামনে ঝাড় দিয়ে ধুলো সংগ্রহ করেন ওঁরা। সোনার দোকান লাগোয়া নর্দমা থেকে জল ছেঁকে কাদা তোলেন। সেখান থেকে সোনার গুঁড়ো, রূপোর গুঁড়ো খুঁজে দোকানিকে ফিরিয়ে দেন। প্রতিদিন দু’শো-চারশো টাকা রোজগার হয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদেরই একজন পঞ্চাশ পেরোন জওয়ার ভীমসে বললেন, “নাগপুর থেকে এক দেড়শো কিলোমিটার দূরে আমাদের গ্রাম। ওখানেও কাজ নেই। বহুদিন আগে জলপাইগুড়ি এসেছি। এখন বাংলাতেও কথা বলতে পারি।” অজয় মাম্ডবী এসেছেন বছর দশেক আগে। তাঁর এক পড়শি জলপাইগুড়িতে কাজে এসেছিলেন। এখান থেকে প্রতি মাসে বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। সে কথা শুনে অজয়ও চলে আসেন। শহরের জয়ন্তীপাড়াতে থাকেন সকলে।
মহারাষ্ট্রের ছোট্ট একটি গ্রাম সুকালি ডাকারাম। সেখানে থেকে আসা এই পরিবারগুলো থাকেনও একসঙ্গে। প্রতিবছর বর্ষার আগে এরা জলপাইগুড়ি ছেড়ে মহারাষ্ট্রে গ্রামে ফিরে যেতেন। চাষবাস করে আবার বিশ্বকর্মা পুজোর আগে ফিরে আসতেন শহরে। দু’মাস হতে চলল জলপাইগুড়িতে লকডাউনে সব সোনার দোকান বন্ধ। কাজ নেই, আয়ও নেই। দলের অলিখিত সর্দার জওয়ার ভীমসে বললেন, “গ্রামে ফিরে পাকাপাকি ভাবেই খেতে কাজ করব ভাবছি। আয় কম হবে। কিন্তু কিছু তো জুটবে।’’ আর্থিক কষ্ট দীর্ঘ দিনের পেশা বদল করে দিতে চলেছে এই পরিবারগুলো।
ওই শ্রমিকদের একজন রবি নেতামের কথায়, “লকডাউন খুললেও আগের মতো কেনাবেচা হবে কিনা কে জানে! কেনাবেচা না হলে ধুলোতে বেশি সোনার গুঁড়ো পাওয়া যাবে না। আমাদের আয়ও হবে না। বাড়িতে সকলে খুব কষ্টে রয়েছে। সকলের সঙ্গে না হয় শাক-পাতা খেয়েই থাকব।” জওয়াররা জানালেন, দু’একদিন অপেক্ষা করবেন। সরকারি গাড়ি না পেলে হেঁটেই রওনা দেবেন বিদর্ভের পথে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy