Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

লকডাউনে এখন মধ্যবিত্তের পুঁজি শুধুই দুর্ভাবনা

কিন্তু মাঝপথে আচমকা কালবৈশাখীর মতো জীবনে এসে ঢুকে পড়ল ‘করোনাভাইসার’।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০৪
Share: Save:

তিনটি গৃহস্থ বাড়িতে কাজের ঠিকা পেয়েছিলাম। না তেমন কোনও বড় টাকার কাজ না। আমার কাছেই বা লাখ লাখ টাকার পুঁজি কোথায়? ওই সামান্য সংস্কার কাজ বা পুরনো ঘরের সঙ্গে দুটো একটা নতুন ঘর বানিয়ে জুড়ে দেওয়ার মতো ছোট কাজ। আমি তাতেই সন্তুষ্ট। কারণ আমি অকৃতদার মানুষ, বাড়িতে শুধু বৃদ্ধ বাবা, মা। একমাত্র ভাই বিয়ে করেছে। দু-চার জন রাজমিস্ত্রি আর গোটা আষ্টেক নির্মাণ শ্রমিককে ভরসা করে আমার এই ছোট ঠিকাদারি ব্যবসাই একমাত্র অবলম্বন।

কিন্তু মাঝপথে আচমকা কালবৈশাখীর মতো জীবনে এসে ঢুকে পড়ল ‘করোনাভাইসার’। তার সঙ্গে জুড়ে বসল লকডাউন। সব নির্মাণ কাজ একদিনে বন্ধ হয়ে গেল। কাজে তালা পড়ল কিন্তু পেটে তো তালা ঝোলানো যাবে না।

ফি হপ্তায় শনিবার দিন মিস্ত্রি আর শ্রমিকদের সপ্তাহের মজুরি দিতে হয়। পেট তো ওদেরও আছে। আর ওদের টাকা নেওয়ার জায়গা বলতে একমাত্র আমি। দিন আনি দিন খাই সংসারে ওদের। ভবিষ্যতের কাজের অগ্রিম মজুরিটুকু চায় ওরা। এখনও তাই শনিবার হলেই ওরা চলে আসছে। যতটা জমানো ছিল শেষ শনিবার পর্যন্ত সবটা দিয়ে ওদের অগ্রিম মজুরি দিয়েছি। এখন আর ওদের টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই আমার।

আমার বাবা, মা মুখ বুজে গৃহবন্দি দশা স্বেচ্ছায় মেনে নিয়েছেন। আমি বা ভাই বাজার করে নিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের রসদ কেনার টাকা যে ফুরিয়ে আসছে সেকথা কাকে গিয়ে বলব? আমার মিস্ত্রি, শ্রমিকদের যেমন আব্দার করে টাকা চেয়ে নেওয়ার জায়গা আছে। কিন্তু আমি কোথাও যাব? নিম্ন মধ্যবিত্তের জ্বালা তাই এখন বুঝতে শুরু করেছি। দরিদ্র সীমার নীচে যেহেতু নই, তাই রেশন দোকানের চাল, আটাতেও আমার কোনওই অধিকার নেই। বিশেষ ত্রাণ বা জিআরের চাল পাব সে আশাও করি না। ও সব ভাবলেই আমাদের মতো যারা তাদের লোকলজ্জার ভয় পেয়ে বসে। কিন্তু কতদিন আমরা এভাবে কচ্ছপের জীবন কাটাব?

আগামী ১৪ এপ্রিল লকডাউন অবধি লকডাউন চলার কথা। তার পরে কি তা উঠে যাবে? সব আবার স্বাভাবিক হবে? এমনটা আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় অনুভব করছি। আবার ১৪, ২১ নাকি পুরো একমাস, কত দিনের যে বন্দিদশা ঘোষণা হয় কে জানে!

কিন্তু এরপর মাটি কামড়ে যে আর লড়াইটা করতে পারব না। সেটা আমি বিলক্ষণ জানি। প্রতি শনিবার শ্রমিক আর মিস্ত্রিরা টাকার জন্যে হাত পাততে বাড়ির গেটে চলে এলে আমি কী ভাবে ওদের মানা করব? আমি কি ওই মুহূর্তে পালিয়ে বাঁচব, নাকি ওদের কঠোর ভাবে না করে দেব? বাড়িতে বসে বসে এই সব সাত-পাঁচ ভাবনা ছাড়া আর কিছুই সম্বল নেই আমার।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy