প্রতীকী ছবি।
কৃষি ক্ষেত্রে এক লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজের কতটা নতুন, কতটা পুরনো, তার বাস্তবতাই বা কতটা— শুক্রবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সাংবাদিক বৈঠক শোনার পরে এমনই আলোচনা উত্তরবঙ্গ জুড়ে। বৃহস্পতিবার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য যে ঘোষণা নির্মলা করেছিলেন, তা ছেঁকে অনেকেই চাল-গমের রেশন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা দেখতে পাননি। এ দিনের ঘোষণার পরেও রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় শাসকদলের সঙ্গে বিরোধীদের। তবে কৃষি, পশুপালন এবং মৎস্যজীবীদের মধ্যেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, উৎপাদন বাজারজাত (মার্কেটিং) করবে কে? নির্মলার ইঙ্গিতমতো সরকারই যদি মার্কেটিংয়ে নামে, তার পরিকল্পনা কবে জানা যাবে? এখন যাঁরা ফড়ে বা দালাল রয়েছেন, তখন তাঁদেরই বা কী হবে?
একপক্ষের বক্তব্য, এ দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশ কৃষি ক্ষেত্রে অনেকটাই এগোনোর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আলঙ্কারিক এক দেশ এক বাজার বা গ্লোবাল থেকে লোকাল শুনতে যত ভাল, কাজের জায়গায় করে দেখাতে গেলে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। যেমন, অনেকেরই প্রশ্ন, অর্থমন্ত্রী যে ক্লাস্টারের কথা বলেছেন, তা কে কী ভাবে গঠন করবে? সেই ক্লাস্টারে পশ্চিমবঙ্গের নামের উল্লেখ না থাকায় আবার অনেকে চিন্তায় পড়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, আদৌ এই রাজ্যের জন্য কিছু হবে তো?
উত্তরবঙ্গের কৃষি ক্ষে্ত্রে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে চা বাগান, আম, ধান চাষ। এ দিন বিভিন্ন রাজ্যের ক্লাস্টারের কথা বললেও নির্মলা পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখ করেননি। যদিও তাঁর দফতরের প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানান, সব রাজ্যের নাম এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে আম নিয়ে ক্লাস্টার বা তা বিপণনের কী ব্যবস্থা করা হবে, তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে মালদহের মানুষ। কেউ কেউ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদহে আমের প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প শুরুর কথা বলেছিলেন। তা হলে তো তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারে কেন্দ্র। মালদহ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘মালদহ জেলায় আম চাষের সঙ্গে লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে যুক্ত রয়েছে। আমের মতো লেচু চাষেও সুনাম রয়েছে জেলায়। এবার করোনা পরিস্থিতিতে আম, লিচু চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রফতানি না হলে দাম মিলবে না। কেন্দ্র সেই বিষয়ে এখনও কোন দিশা দেখাচ্ছে না।’’ একই চিত্র চা শিল্পে বা ধানের ক্ষেত্রেও।
এ দিন অর্থমন্ত্রী ১১ দফা প্যাকেজের ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে ৮টি অনুদান, বাকি তিনটি প্রশাসনিক সংস্কার। নিত্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধনের কথাও বলেন তিনি। রাজ্য ধরে ধরে একটি বিশেষ ফসলের ক্লাস্টার তৈরি, গঙ্গার ধার ধরে ওষুধের গাছ, মৌমাছি পালন বা হিমঘর, শস্য গুদাম বাড়ানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। আন্তঃরাজ্য শস্য বা ফসল বিক্রি, ই-ট্রেডিং, শস্য পরিবহণ আইনের পরিবতর্নের কথা বলেছেন। কিন্তু অর্থনীতির সঙ্গে জড়িতরা জানাচ্ছেন, করোনার জেরে মানুষের হাতে টাকার জোগান কমেছে। নগদ টাকা অর্থনীতিতে প্রয়োজন। তা কী ভাবে কৃষিজ ক্ষেত্রে আসবে, সেটা প্যাকেজ থেকে বোঝা যায়নি। রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ নিজেই কৃষক। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের জন্য কখনও ভাবিনি। এর জন্যেই মহারাষ্ট্র, গুজরাতের মতো রাজ্যে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা মাঝে মধ্যেই সামনে আসে। কৃষক আন্দোলনও হয়েছে বহুবার। এখন লকডাউনের সময়ে মিথ্যে কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।’’ রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘নোটবন্দি, জিএসটি আমরা দেখেছি। এবার করোনা প্যাকেজ দেখছি। কোথায় টাকা কীভাবে আসবে, তা আমরা দেখব।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রথীন বসু বলেন, ‘‘অতীতে কোনওদিন সরকারি টাকা নীচ অবধি যায়নি, তাই বিরোধীরা নানা কথা বলছে। লকডাউনেও জনধনের টাকা হাতেহাতে আসছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী মানুষের জন্য কী করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy