শ্রমিকদের ফেরানোর প্রস্তুতি মালদহ স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
মাঝে মাত্র চার দিনের ব্যবধান। শুক্রবার করোনা সংক্রমণে ফের খাতা খুলল মালদহ জেলায়। এ দিন একসঙ্গে ৭ জন সংক্রমিতের খোঁজ মিলেছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এর সঙ্গে আরও পরিযায়ী শ্রমিক ট্রেনে করে জেলায় ফিরবেন— এই খবরে উদ্বেগ বেড়েছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে। একটি সূত্রের খবর, এখন পর্যন্ত যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদেরই সকলের লালারস পরীক্ষার পর্ব শেষ হয়নি। বেশ কিছু ‘ব্যাকলগ’ রয়ে গিয়েছে। তার উপরে নতুন করে শ্রমিক জেলায় ঢুকলে চাপ বাড়বে। তার উপরে এ দিন সাত জনের করোনা পজ়িটিভি বার হয়েছে। ‘ব্যাকলগ’ রয়েছে বলে নতুন করে লালারস নেওয়াও হয়নি এ দিন। এ কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরই।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনে আক্রান্তদের মধ্যে কালিয়াচক-১ ব্লকের ৩ জন, ইংরেজবাজার ব্লকের ১ জন, পুরাতন মালদহ ব্লকের ১ জন, মানিকচক ব্লকের ১ জন এবং হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের ১ জন। যদিও হরিশচন্দ্র-২ ব্লকের আক্রান্ত রোগীর বাসস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। একটি সূত্রের দাবি, তাঁর বাড়ি ওই ব্লক সংলগ্ন বিহারের একটি গ্রামে। কিন্তু অভিযোগ, তিনি ভিন রাজ্য থেকে ফিরে মালদহ গৌড়কন্যা বাস টার্মিনাসে লালারস পরীক্ষার সময় নিজের বিহারের বাড়ির ঠিকানা না দিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুরের ঠিকানা দিয়েছিলেন। এ দিনের সাত জনে যোগ করলে মালদহে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৬ জনে।
একসঙ্গে এত জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাড়ি থেকে এনে পুরাতন মালদহের নারায়ণপুর বাইপাসে থাকা জেলার কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করে। কোভিড হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই হাসপাতালে এখন ২৪ জন আক্রান্ত ভর্তি রয়েছেন। বাকি একজন ভর্তি শিলিগুড়ি কোভিড হাসপাতালে। রতুয়া বাহারালের আক্রান্ত মহিলা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সাত জনই ভিন্ রাজ্য থেকে এসেছেন। গত কয়েক দিন মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, গুজরাত বা ওড়িশা থেকে যে শ্রমিকরা জেলায় ফিরেছেন, সেই সংখ্যাটা প্রায় দেড় হাজার। তেমনই ৫০০ জনের নমুনা শুক্রবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয় মালদহ মেডিক্যালের ভাইরোলজি ল্যাবে। তার মধ্যেই রয়েছেন ওই সাত জন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূষণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নতুন করে আক্রান্ত ৭ জনকে জেলার কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’’ এই পরিস্থিতিতে জেলায় কন্টেনমেন্ট জ়োনর সংখ্যাও প্রশাসন বাড়িয়ে ১৪ করে দিয়েছে। কন্টেনমেন্ট জ়োন থেকে যাতে মানুষ অন্যত্র চলে না যায়, তার জন্য চলছে পুলিশি টহল। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ হচ্ছে।’’
এই পরিস্থিতিতে নতুন করে জেলায় ঢোকা পরিযায়ী শ্রমিকেরাই প্রশাসনের বড় মাথাব্যথা। বেঙ্গালুরু থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিশেষ ট্রেন ফিরেছে মালদহে। এ বার অন্য রাজ্যগুলি থেকে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আরও বিশেষ ট্রেন আসবে জেলায়। রেল সূত্রে জানা গিয়েছ, ১৭ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত মালদহে আসছে ২৪টি বিশেষ ট্রেন। মালদহ ছাড়াও এই ট্রেনগুলিতে থাকবে দুই দিনাজপুর এবং মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকেরাও। প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, এখনই সব লালারস পরীক্ষা করা সম্পূর্ণ হয়নি। নতুন করে শ্রমিক ঢুকতে শুরু করলে তাই মাথাব্যথা বাড়বে।
মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূষণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মালদহ মেডিক্যালের ভাইরোলজি ল্যাবে দু’হাজারের বেশি লালারসের নমুনা ‘ব্যাকলগ’ হয়ে আছে। সেগুলি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা না করলে সমস্যা রয়েছে। তাই এ দিন নতুন করে পরিযায়ী শ্রমিকদের লালারসের নমুনা নেওয়া যায়নি।’’ তাঁদের শুধু থার্মাল স্ক্রিনিং করেই জেলার সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলির সরকারি কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে, উত্তর দিনাজপুরের আলুয়াবাড়ি রোড স্টেশনে বিশেষ ট্রেনের চেন টেনে নেমে পড়েন একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক। এ দিন দুপুরে ইসলামপুরের জীবন মোড়ের কাছে পরিযায়ী শ্রমিক বোঝাই ট্রাক আটক করেন বাসিন্দারা। তবে শ্রমিকেরা পালান। রায়গঞ্জ পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকরা এলেই যাতে গ্রামবাসী প্রশাসনের নজরে নিয়ে আসেন, তার জন্য সচেতন করা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy