Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ব্যতিক্রম তোর্সা, স্বস্তি কোচবিহারে

এ যেন উৎসবের মরসুমে অচেনা তোর্সার ঘাট। অন্যবারের মত ভেজা খড়ের স্তুপ নেই, নেই কাঠামোর চিহ্নও। ইতিউতি দু’চারটে মাটির প্রদীপ ছাড়া নদীর পাড়ের একেবারে সাফসুতরো। পড়ন্ত বিকেলে নদীর জলে সূর্যের আলো লাল রঙ ঢেলে দিয়েছে।

পরিচ্ছন্ন তোর্সার পাড়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

পরিচ্ছন্ন তোর্সার পাড়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

এ যেন উৎসবের মরসুমে অচেনা তোর্সার ঘাট। অন্যবারের মত ভেজা খড়ের স্তুপ নেই, নেই কাঠামোর চিহ্নও। ইতিউতি দু’চারটে মাটির প্রদীপ ছাড়া নদীর পাড়ের একেবারে সাফসুতরো। পড়ন্ত বিকেলে নদীর জলে সূর্যের আলো লাল রঙ ঢেলে দিয়েছে। সবমিলিয়ে যেন ভিন্ন এক ছবি। গত কয়েক বছরের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। খানিকটা উলট পুরাণও বটে। কোচবিহার শহরের নিত্যানন্দ আশ্রম লাগোয়া তোর্সা নদীর করুণাময়ী তোর্সা ঘাটের এমন পরিচ্ছন্নতার ‘কৃতিত্ব’ নিয়ে অবশ্য চাপানউতর প্রকাশ্যে এসেছে।

ওই বিষয়টিকে শাসক ও বিরোধী সব শিবিরই নিজেদের ‘সাফল্য’ হিসাবে দেখছেন। পুরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি, দুর্গাপুজোর বিসর্জনের আগে ওই ঘাটে আলো সহ বিভিন্ন অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করা হয়। নিয়মিত নজরদারিও হয়েছে। কর্মীদের সাফাইয়ের কাজে লাগানো হয়। কালী পুজোতেও নজর রাখা হয়। যার জেরেই ঘাট ঝকঝকে হয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত কোচবিহার পুরসভার চেয়ারপার্সেন রেবা কুন্ডু বলেন, “ পুরসভার উদ্যোগেই ওই ঘাট সাফাই হয়েছে।”

বিরোধীরা অবশ্য ওই কৃতিত্ব তাঁদের বলে দাবি করেছে। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “পুর পরিষেবা নিয়ে আমরা লাগাতার আন্দোলন করছি। নদী ঘাট সাফাই করা না হলে ফের আন্দোলন হত। সেটা এড়াতেই তড়িঘড়ি সাফাইয়ের কাজ করা হয়েছে। এটা আসলে আমাদের আন্দোলনের জয়।” ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর তপন ঘোষও বলেন, “আমরা আগেভাগেই এ নিয়ে সরব হয়েছিলাম।” যুব কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি সম্রাট মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “ কৃতিত্ব কারও একার নয়। সামগ্রিকভাবে এটা সম্ভব হয়েছে গোটা কোচবিহারবাসীর জন্য।”

কৃতিত্ব যেই নিক, শহরের বাসিন্দা ও পরিবেশপ্রেমীরা অবশ্য এতে খুশি। বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, কোচবিহারের ওই ঘাটে ফি বছর দুর্গা প্রতিমা বির্সজন হয়। এবারেও দু’দিন ধরে বিসর্জন পর্ব চলেছে। তার ওপর গত দু’দিন ধরেই বিক্ষিপ্তভাবে কোচবিহার শহর ও লাগোয়া এলাকার বেশ কিছু কালীপ্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিবারই বিসর্জনের পর কাঠামো সংগ্রহে একটি চক্র তৎপর থাকে। নদীর পাড়ে কাছাকাছি থাকা কাঠামো তারা তুলে নেয়। তারপরেও কিছু কাঠামো থেকে বাঁশ, দড়ি, খড়, থার্মোকলের নানা সামগ্রী পাড় জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। এ বারও ঘাট দ্রুত সাফাই না হলে সে সব চিহ্ন থাকত।

তবে বিসর্জনের ঘাটের পাড়ই শুধু নয়, লাগোয়া চরেও সাফাইয়ে নজরদারি দরকার। অভিযোগ, ফেলে দেওয়া কিংবা উড়ে আসা প্লাস্টিকও নদীতে পড়ায় দূষণ হচ্ছে। দুর্গাপুজো থেকে রাসমেলা, জেলায় উৎসবের মরসুমে ওই সমস্যা বেশী থাকে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “পরিবেশ দফতরের উদ্যোগে জেলায় উৎসবের মরসুমে বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়াতে অস্থায়ী শিবির করা হলে তা আরও বেশি সহায়ক হবে। ভেষজ রঙ ব্যবহার, বিসর্জনের পর ক্রেন দিয়ে নদী থেকে প্রতিমা তুলে ফেলার মত পরিকাঠামো তৈরি নিয়েও ভাবা দরকার।”

অন্য বিষয়গুলি:

Immersion Embankment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE