নিজের তৈরি প্রতিমা হাতে সপ্তরং। রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
বাড়িতে ঢুকে বসার ঘর পেড়িয়ে ডান দিকে পড়াশুনার ঘর। কাচের আলমারি ভিতরে থরে থরে সাজানো সব মূর্তি। কোনওটা ইঞ্চি ছয়েক, কোনওটা এক ফুট, কোনওটা আবার দু’ফুটের। দুর্গা পুজো বা কালী পুজোয় তার তৈরী মডেল প্রতিমা স্থান পায় পাড়ার মন্ডপে। নিপুন হাতে তৈরি ছোট ছোট মূর্তি দেখে তাক লেগে যায় দর্শকদের। মেলে পুরস্কারও।
ধূপগুড়ির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজিপাড়ায় বাড়ি সপ্তরঙের। ধূপগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এই পড়ুয়া প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আঁকা শেখা শুরু করেছিল। সাত বছর বয়স থেকেই ছবি আঁকার পাশাপাশি মূর্তি গড়া শুরু। পড়াশুনার অবসরে এটাই তাঁর নেশা। শখের মুর্ত্তি গড়তে গড়তে এখন তার মুর্ত্তির সংখ্যা ৩০টি। সবই ঘরের শো-কেসে সাজানো। দু’একটি মুর্ত্তি দেখে খুশি হয়ে আত্মীয়রা নিয়েও গিয়েছে কয়েকটি।
এ বারও দু’টি মাটির মূর্তি গড়া হয়ে গিয়েছে সপ্তরঙের। ৩৪ ইঞ্চি উঁচু ও ৩৪ ইঞ্চি চওড়া কাঠ বাঁশের কাঠামোয় সপরিবার দুর্গার মুর্ত্তি গড়া শেষ হয়েছে তাঁর। ওই মুর্ত্তি তৈরি করতে লেগেছে চার আঁটি খড়, ছ’কিলো মাটি, কাপড় ও দেবীর অলঙ্কার নিয়ে মূর্তির ওজন ১০ কিলোগ্রাম। ২১ দিনে শেষ হয়েছে এই কাজ। এরই সঙ্গে মাটি দিয়ে নৌকার উপর এক ফুট উঁচু সপরিবার দুর্গার মুর্তিও তৈরি করেছে সে। এবারও তার তৈরি মূর্তি স্থান পাবে পাড়ার মণ্ডপে। তার এই মূর্তি গড়ার সমস্ত খরচই যোগান তার বাবা।
সৃষ্টিতে মগ্ন সপ্তরং। —নিজস্ব চিত্র
সপ্তরঙের কথায়, “পড়ার ফাঁকে সময় পেলেই মূর্তি তৈরি করি। আমার খুব ভাল লাগে। পড়াশুনা শিখে যে কাজই করি না কেন মূর্তি গড়ার শখ থাকবেই। তবে মনের ইচ্ছা আছে বড় হয়ে নিজের পাড়ার দুর্গা পুজার প্রতিমা নিজের গড়ে দেব। ” পুজোর আগে মূর্তি তৈরির জন্য পড়াশুনায় যে ঘাটতি হয় তাও অস্বীকার করেনি সপ্তরঙ। তবে ক্লাসে প্রথম, দ্বিতীয় হওয়া আটকায় না তাতে। এ বার পুজোয় সপরিবারে বেড়াতে যাওয়ার কথা বেনারস। বেড়াতে গেলে মন্ডপে প্রতিমা থাকবে কার দায়িত্বে তা নিয়ে চিন্তিত সপ্তরঙ। এতো আর পুজোর প্রতিমা নয়।
যে কোনও পুজার আগে স্কুলে যাতায়াতের পথে যত পালবাড়ি আছে সেখানে ঢুঁ মেরে দেখে নেওয়ার নেশা সেই ছোটবেলা থেকেই। বাড়িতে বসে নেটে প্রতিমা দেখাও তার নেশা। বাবা তুষার মণ্ডলও একজন শিল্পী। বাবার হাতেই হাতেখড়ি। তুষারবাবু বলেন, “ আমি মনে করি এই বয়সেই ছেলে আমাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। আমি কখনও মাটির শিল্পকলা করিনি। খাতার সঙ্গে মৃৎ শিল্পেও বেশ স্বচ্ছন্দ সে। এই নেশাটা তার ছোটবেলা থেকেই। চার বছর বয়স থেকে পড়াতে বসলেই আগে ছবি আঁকার খাতাটা এগিয়ে দিত। খাতায় কোন প্রতিমার ছবি না এঁকে দিলে পড়াশুনায় মন দিত না।’’ তবে তিনি চান না বড় হয়ে মূর্তি গড়াকে পেশা হিসাবে নিক সপ্তরঙ। তবে একমাত্র সন্তানের উৎসাহ দেখে বাবার মত খুশি মা মঞ্জু মণ্ডলও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy