গুড্ডু কুমার গ্রেফতার। — ফাইল চিত্র।
শিলিগুড়ি থেকে আইএসআই ‘লিঙ্কম্যান’ সন্দেহে ধৃত গুড্ডু কুমার নিজে শুধু ‘হানি ট্র্যাপে’ পড়েনি, তাকেও সামরিক অফিসারদের ফাঁসানোর জন্য পাকিস্তান থেকে একই ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে অভিযোগ৷ যদিও সে কাজে গুড্ডু সফল হয়নি বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। গত ২০ ডিসেম্বর শিলিগুড়ির ভারতনগর এলাকার থেকে ধরা পড়ে গুড্ডু। এসটিএফ প্রাথমিক তদন্ত এবং জেরার পরে জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গে মূলত শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকার সেনা, বায়ুসেনার মতো অফিসারদের ফোন নম্বর, ছবি জোগাড় করতে গুড্ডুকে বলা হয়েছিল৷ এই সামরিক অফিসারদের একাংশকে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফাঁসিয়ে নানা তথ্য জোগাড়ের পরিকল্পনা ছিল আইএসআইয়ের৷ বিভিন্ন ভাবে অফিসারদের ফোন নম্বর জোগাড়ে গুড্ডুকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলেও জেরায় সে তাদের কাছে স্বীকার করেছে। আদালতে সব তথ্য এসটিএফ লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি, বিহারের পুলিশের বিশেষ দলও ধৃতের জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিহারের পূর্ব চম্পারণের বাসিন্দা হলেও শিলিগুড়ি আসার আগে, গুড্ডু বিহারের মোতিহারি জেলায় থাকত। সেখানে একটি স্কুলে এবং প্রাইভেটে অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে কাজ করত। বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি সাইটের সদস্য হওয়ার পরে কয়েকটি টোল-ফ্রি এবং হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বরের মাধ্যমে তার সঙ্গে পাকিস্তানের লোকজনের যোগাযোগ হয়। কাজ না করলে তার পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি, তথ্য ফাঁস করা হবে বলে ব্ল্যাকমেল করা হয়। প্রথমে রাজি না হলেও পরে আইএসআইয়ের কয়েকজন ‘হ্যান্ডলার’-এর মাধ্যমে গুড্ডু শিলিগুড়িতে আসে।
স্থানীয় সামরিক কেন্দ্রগুলির ছবি সংগ্রহ শুরু করার পরে অফিসারদের সঙ্গে আলাপ জমানোর জন্য গুড্ডুকে বলা হয়েছিল। পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, শিলিগুড়ির কাছে সুকনা গোটা উত্তরবঙ্গ, সিকিমের সেনা সদর দফতর। তেমনই, বাগডোগরা এই গোটা অঞ্চলের বায়ুসেনা ঘাঁটি। কাওয়াখালিতে সিআরপি-র সদর দফতর রয়েছে। রানিডাঙায় এসএসবি এবং কদমতলায় বিএসএফের উত্তরের সদর দফতর। ধৃত প্রথমে সুকনা, এনজেপি সেনা ছাউনি, বাগডোগরা বায়ু সেনা ঘাঁটি এবং দার্জিলিঙের লেবং সেনা ছাউনির কিছু বাইরের থেকে ছবি নিয়ে হোয়াট্সঅ্যাপ করে টাকা পায়। এর পরে, ‘হানি ট্র্যাপে’ সেনা অফিসারদের ফাঁদে ফেলার জন্য গুড্ডুকে বলা হয় বলে দাবি।
গোয়েন্দারা জানান, অফিসারদের মধ্যে যারা অবসরে রেস্তরাঁ, পানশালা, বিনোদন পার্ক, শপিং মলে নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাঁদের সঙ্গে আলাপ জমাতে গুড্ডুকে বলা হয়। এ ছাড়া, বিভিন্ন কাজের সূত্রে সেনা ঘাঁটিগুলিতে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁদের থেকে সুকৌশলে অফিসারদের নম্বর জোগাড় করার জন্য বলা হয়। গুড্ডুকে বলা হয়েছিল, এই কাজে সময় লাগলেও, অসুবিধা নেই। সেনাবাহিনী সংক্রান্ত খবর সরাসরি জোগাড়ের জন্য ‘লিঙ্কম্যান’ পাওয়াটাই লক্ষ্য। এক সময় গুড্ডু শিলিগুড়িতে বড় হোটেল খোলার জন্য ৫০ লক্ষ টাকাও দাবি করেছিল। কিন্তু তা দেওয়া যাবে না বলে উড়িয়ে দিয়ে সামান্য কিছু টাকা দেওয়া হয়। অফিসারদের অনুমান, লক্ষাধিক ওই টাকা দিয়েই গুড্ডু শেষ অবধি টোটো কিনে ব্যবসা করছিল।
আপাতত নতুন কোনও ‘সূত্র’ গোয়েন্দাদের হাতে না এলেও, বহু বছর পরে আইএসআই যে ফের শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে ‘নেটওয়ার্ক’ তৈরি করতে চাইছে তা পরিষ্কার তাঁদের কাছে। গোয়েন্দা অফিসারেরা জানাচ্ছেন, কালিম্পঙে পীর মহম্মদ, গুড্ডু কুমারের ধরা পড়াই এর প্রমাণ। সাত-আট বছর আগে, খড়িবাড়িতে কয়েকজন ‘লিঙ্কম্যান’ গ্রেফতার হয়। তারও ১০ বছর আগে, শিলিগুড়িতে দিলশাদ নামে এক জনকে ‘এজেন্ট’ অভিযোগে গ্রেফতারের পরে বহু দিন পাকিস্তানের নজর এ দিকে পড়েনি বলে খবর ছিল গোয়েন্দাদের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy