একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তা বঙ্কিম দেবনাথ দু’বছর ধরে ফেরার। তাঁকে ধরতে এ বার সিবিআই তদন্তের দাবি তুললেন শাসক দলের নেতা।
আলিপুরদুয়ারে শাসক দল তৃণমূলেরই সহ সভাপতি প্রশান্ত নাহার অভিযোগ, জেলা পুলিশের তত্কালীন কর্তাদের একাংশের মদতেই পালিয়েছেন বঙ্কিম। প্রশান্তবাবুর দাবি, বঙ্কিমবাবুর সংস্থা এলাকা থেকে প্রায় কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছিল। দু’শো কোটি টাকা নিয়ে বঙ্কিমবাবু পালিয়েছেন বলে দাবি প্রশান্তবাবুর। তিনি বলেন, পুলিশ এমনকী বঙ্কিমবাবুর বিরুদ্ধে এত দিনেও কোনও চার্জশিট জমা দেয়নি। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া অবশ্য বলেন, “বঙ্কিম রাজ্যের বাইরে রয়েছেন। কয়েকবার আমরা তাঁকে ধরার চেষ্টা চালিয়েছিলাম। তদন্ত চলছে।” সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “পুলিশ কর্তাদের কেউ বঙ্কিমবাবুকে মদত দিয়েছেন, তদন্তে এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি।”
অভিযোগ উঠেছে, জেলা পুলিশের তত্কালীন এক কর্তা লগ্নিকারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বঙ্কিমবাবুর কাছ থেকে টাকা পাইয়ে দেবেন। কিন্তু তার চার দিন বাদে কী ভাবে সকলের নজর এড়িয়ে বঙ্কিমবাবু সস্ত্রীক পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে সিবিআই তদন্ত চাইলেন তৃণমূল নেতা প্রশান্তবাবু। তাঁর দাবি, এমনকী, টাকা দিগুণ করার যে চক্র বঙ্কিমবাবু চালাচ্ছিলেন, পুলিশ কর্তাদের একটি অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তার সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে।
তৃণমূল নেতাদের প্রশ্ন, যেখানে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায় কাশ্মীরে গা ঢাকা দেবার চেষ্টা করলেও এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের রাজ্য পুলিশ সেখান থেকে গ্রেফতার করতে পারে, সেখানে টানা দুই বছর ধরে পুলিশ কেন বঙ্কিমবাবুকে খুঁজে পেল না? সারদা, রোজ ভ্যালি সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে যখন সিবিআই তদন্ত চালানো হচ্ছে, সে সময় কয়েক হাজার মানুষকে নিঃস্ব করে ফেরার ফালাকাটার জটেশ্বর গ্রামের বঙ্কিম-কাণ্ড নিয়ে কেন সিবিআই তদন্ত হবে না তা নিয়েও তৃণমূলের নেতা সহ সাধারণ লগ্নিকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রশান্তবাবুর কথায়, “বঙ্কিম-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত শুরু হলে পুলিশ কর্তাদের একটি অংশ ওই কাণ্ডে জড়িয়ে পড়বেন বলে মনে হচ্ছে। তত্কালীন পুলিশ সুপার নিজে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তারপরও বঙ্কিম কী ভাবে পালাতে পারলেন, তা দেখা দরকার। বঙ্কিম ধরা পড়লে জেরায় বহু তথ্য যেমন উঠে আসবে, পাশাপাশি আমানতকারীরা টাকা ফেরত পেতে পারেন।”
২০১২ সালের অক্টোবরে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা ব্লকের জটেশ্বর গ্রামের যুবক বঙ্কিম টাকা দ্বিগুণ করার কারবার শুরু করেন। পনেরো দিনে টাকা সে দ্বিগুণ পাইয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। প্রথম দিকে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ তাঁর কাছে টাকা জমা রাখতে শুরু করেন। প্রথম দিকে দ্বিগুণ টাকা ফেরতও দেন তিনি। তাতেই আরও লগ্নিকারী টাকা ঢালতে থাকেন তাঁর সংস্থায়। জটেশ্বরের বঙ্কিমবাবুর নাম কয়েক মাসের মধ্যে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে যায়। ফালাকাটা ব্লক তো বটেই শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদহ সহ বিভিন্ন জেলার লোকজন তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা গচ্ছিত রাখতে শুরু করেন। জটেশ্বর গ্রামের বহু মানুষ ভিটে মাটি বন্ধক রেখে টাকা রাখতে শুরু করেন। টাকা জমা রাখার জন্য বঙ্কিমবাবুর বেশ কয়েকজন এজেন্টও তৈরি হয়। কিন্তু এরপরেই প্রশাসন তাঁকে গ্রেফতার করতে উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করা যায়নি। কেননা, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই তখন ছিল না।
পুলিশের একটি অংশ জানিয়েছে, ২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলায় অপরাধ বিষয় বৈঠকে এক পুলিশকর্তা বঙ্কিমবাবুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ নিয়ে গ্রেফতার করার জন্য ফালাকাটা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে নির্দেশ দিয়েলেন। তবে মানুষ সে সময় টাকা পেয়ে আসছিলেন, তাই কেউ বঙ্কিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিতে রাজি হননি। বাধ্য হয়ে সেই সময়ে ফালাকাটা থানার তত্কালীন আইসি নিজে উদ্যোগী হয়ে এলাকায় বেসরকারি সংস্থায় লগ্নি করার ব্যপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রচার করতে শুরু করেন। জটেশ্বর বাজারে ওই থানার জিপ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপরে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন মাইক বাজানো হয়েছে অভিযোগে ওই আইসি-কে ক্লোজও করে দেন পুলিশকর্তারা। প্রশান্তবাবুর দাবি, “পুলিশকতার্দের একাংশ তখন বঙ্কিমবাবুকে গ্রেফতার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। বঙ্কিমবাবু নিজেও তাই চাইছিলেন। কেননা, তখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলেও আর ক’দিনের মধ্যেই যে তাঁর স্বরূপ প্রকাশিত হয়ে পড়বে, সে কথা বঙ্কিমবাবু ও তাঁর পছন্দের পুলিশকর্তারা জানতেন।”
প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের জেলা নেতা যোগেশ বর্মন বলেন, “পুলিশ কেন এতদিন চুপচাপ বসে রয়েছে, তা বুঝতে পারছি না। বঙ্কিমবাবু কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন, তাঁকে খুঁজে বার করতে পুলিশের তত্পর হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে, প্রয়োজনে সিআইডি তদন্তও করা উচিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy