পটলডাঙার প্যালারাম কচি পটোল দিয়ে রোজ শিঙি মাছের ঝোল খেত। তার পিলে খারাপ ছিল। তাই চেঁচিয়ে পিলে চমকে দিত টেনিদা।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্পের সেই বিখ্যাত শিঙি কিন্তু এখন প্রায় অদৃশ্য। তার বদলে মিলছে রাক্ষুসে শিঙি মাগুর। কিন্তু তার স্বাদ মোটেই দেশি শিঙির মতো নয়। সেই জায়গা নিচ্ছে বাংলাদেশের শিঙি।
চোরাকারবারীদের হাত ধরে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে প্রতি দিন বাক্সবন্দি হয়ে শিঙি মাছ ঢুকছে কোচবিহারের বাজারে। আকারে অনেকটাই দেশি মাছের মতো। ওই শিঙির চাহিদাও তুঙ্গে রয়েছে বাজারে। সেখানে পুকুরে বা বাড়ির ছোট্ট জলাশয়ে চাষ হওয়া রাক্ষুসে শিঙির চাহিদা অনেকটাই কমে গিয়েছে। বাজারে যাঁরা মাছ কিনতে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এই মাছেরই অপেক্ষা ছিল। বাজার ছেয়ে আছে বড় বড় শিঙি মাগুর মাছে। কিন্তু তাতে তেমন স্বাদ হয় না। দেশি মাছের স্বাদ ভাল। কিন্তু মেলে কম বলে তার দামও চড়া। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, ও পার থেকে আসা ওই মাছের স্বাদ অনেকটাই দেশি মাছের কাছাকাছি। দামেও অনেকটা কম। দেশি মাছ যেখানে কম পক্ষে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, সেখানে ৩০০ টাকাতেই মেলে ওই মাছ।
ওই খবর রয়েছে মৎস্য দফতরের কাছেও। চলতি বছরে শিঙি, মাগুর, আড়, বোয়াল মাছের প্রজনন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। কোচবিহার জেলা মৎস্য আধিকারিক অলোক প্রহরাজ বলেন, “স্থানীয় শিঙি মাছ খুব কম পাওয়া যায় এ কথা ঠিক। চলতি বছরে প্রজনন কেন্দ্রের মাধ্যমে ওই মাছের চাষ বাড়ানো হবে।” ওই দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “স্থানীয় জায়গায় ওই মাছের জোগান কম থাকায় বাংলাদেশ থেকে ঢুকছে।”
মৎস্য দফতর সূত্রেই খবর, এক সময় কোচবিহার জেলায় যথেষ্ট শিঙি মাছ পাওয়া যেত। বাজারগুলোতে সকাল ও সন্ধে দু’বেলায় ওই মাছ পাওয়া যেত। এখন ওই মাছ দেখা যায় না বললেই চলে।
সেই চাহিদা মেটাতেই রাক্ষুসে শিঙির চাষ শুরু হয়। ওই মাছ আকারে অনেকটা বড় হয়। স্বাদেও তা স্থানীয় মাছের ধারেকাছে নেই। সেই সুযোগেই বাংলাদেশ থেকে শিঙি মাছের আমদানি হতে শুরু হয়েছে। নাজিরহাট, গীতালদহের মতো সীমান্তের নদীপথ দিয়ে ওই মাছ পাচার হয়। বড় বড় ড্রামে মাছ বোঝাই করে তা জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এ পারের কারবারিরা তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেয়। এর পরেই গোটা জেলার বাজারে তা ছড়িয়ে পড়ে।
কারবারিরা জানায়, নদী পথে কাঁটাতারের কোনও বেড়া নেই। দীর্ঘ নদী পথে বিএসএফের নজরদারি সহজেই এড়ানো যায়। দিনহাটার এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, “শিঙি মাছের চাহিদা বাজারে ভাল। আমাদের হাতে বাংলাদেশি শিঙি এলে বিক্রি করি।” বিএসএফের কর্তা বলেন, “পাচারকারিদের রুখতে সব সময় নজর রাখা হয়।”a
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy