Advertisement
০৭ নভেম্বর ২০২৪

রাজবংশীরা ক্ষুব্ধ, মতুয়াও

স্থানীয়দের মধ্যে অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন, যাঁরা আর্থ-সামাজিক ভাবেও জড়িয়ে রয়েছেন রাজবংশীদের সঙ্গেই। তাঁরাও ভূমিপুত্র। তাঁদের কোনও ভাবে বিপাকে পড়েন, সেটা চাইছেন না রাজবংশী সম্প্রদায়ের লোকজন।

বিক্ষোভের আঁচ।

বিক্ষোভের আঁচ।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
মালদহ শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:৪৮
Share: Save:

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে বিরোধিতার সুর মালদহের রাজবংশীদের। সংশয়ে জেলার মতুয়ারাও।
রাজবংশী সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশের বক্তব্য, ধর্মের ভিত্তিতে আনা ওই বিল মানা যাবে না। তাঁদের অনেকেই ওপার থেকে এপারে এসে বসতি গড়েছেন। তাঁদের কারও কারও সব নথি বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে। সে সব নতুন করে জোগাড় করা কঠিন। তা ছাড়া, স্থানীয়দের মধ্যে অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন, যাঁরা আর্থ-সামাজিক ভাবেও জড়িয়ে রয়েছেন রাজবংশীদের সঙ্গেই। তাঁরাও ভূমিপুত্র। তাঁদের কোনও ভাবে বিপাকে পড়েন, সেটা চাইছেন না রাজবংশী সম্প্রদায়ের লোকজন।

আগামী ৭ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবসকে সামনে রেখে সিএবি নিয়ে আন্দোলনের পথে নামতে চলেছে কামতাপুর পিপলস পার্টিও (ইউনাইটেড)। সংগঠনের মালদহ জেলা সম্পাদক সুভাষ বর্মণ বলেন, ‘‘সিএবি-র নামে জাতিবিদ্বেষ আমরা চাই না। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে তাড়ানোর চক্রান্তও মানছি না। দুই সম্প্রদায়ই কামতাপুরি ভাষায় কথা বলে। তাই কামতাপুরি ভাষাভাষীরা এক হয়েই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব।’’

সুভাষ আরও বলেন, ‘‘এপারের হিন্দুদের অনেকের আত্মীয়স্বজন এখনও বাংলাদেশে রয়েছেন। সেখানে তাঁরা শান্তিতেই রয়েছেন। এপারে সিএবি নিয়ে গোলমাল শুরু হলে ওপারের সংখ্যালঘুরাও কি ভাল থাকবেন? তাঁদের উপরে ফের অত্যাচার হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে?’’ তিনি জানিয়েছেন, আগামী ৭ জানুয়ারি গাজলে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে সিএবি-র বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করা হবে। এনআরসি নিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ করে, তার উপরও কর্মসূচি ঠিক হবে।
সিএবি নিয়ে আপাতত খুশি নয় মালদহের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতুয়াও। তাঁদের বেশিরভাগই উদ্বাস্তু। অনেকের বক্তব্য, এই বিল আইনে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা দ্বিধাগ্রস্ত।

মালদহ জেলার বামনগোলা, হবিবপুর, গাজল, পুরাতন মালদহ— মূলত এই চারটি ব্লকে প্রচুর রাজবংশী মানুষের বসবাস। চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুরেও ওই সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মানুষ রয়েছেন। যাঁরা নিজেদের ভূমিপুত্র বলে দাবি করেন। সঠিক পরিসংখ্যান না মিললেও রাজবংশী সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক মানুষের বাস রয়েছে এই জেলায়।
বামনগোলা ব্লকের পাকুয়াহাট পঞ্চায়েতের গৌরনন্দনবাটী গ্রামের বাসিন্দা নৃপেন বর্মণ, জগদীশ বর্মণ বলেন, ‘‘এই গ্রামে রাজবংশী সম্প্রদায়ের অনেকে রয়েছেন, যাঁরা ভূমিপুত্র। আবার অনেকে ওপার থেকে এসে থাকছেন। সত্তর ও আশির দশকে বন্যায় অনেকের জমির দলিল থেকে শুরু করে অন্য কাগজ ভেসে গিয়েছে। এখন সিএবির নামে আমাদের দেশ থেকে তাড়ানোর চক্রান্ত চলছে। এ মানা যায় না।’’

রাজবংশীদের পাশাপাশি মালদহ জেলার বামনগোলা, হবিবপুর, গাজল ও পুরাতন মালদহ ব্লকে ৫০ হাজারেরও বেশি মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বাস রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের সকলের কাছে ভোটার ও আধার কার্ড থাকলেও তাঁরা উদ্বাস্তু হিসেবেই রয়েছেন। সিএবি-তে উদ্বাস্তুদের স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও মতুয়াদের বেশিরভাগ অংশ কিন্তু তাতে আশ্বস্ত নন।

মতুয়া প্রধান বামনগোলার টিয়াকাঠি থিনগর গ্রামের প্রদীপ বিশ্বাস, বিপুল বিশ্বাসের কথায়, ‘‘১৯৭১ সাল বা তার পরে বাংলাদেশ থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের অনেকে এই গ্রামে এসে বাস করছেন। কিন্তু সিএবি বা এনআরসি-র জেরে তাঁদের এই দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না তো?’’ মতুয়া মহাসঙ্ঘের মালদহ জেলা কমিটির সম্পাদক কাশীশ্বর মৈত্র বলেন, ‘‘এখন শুধু সিএবি বিল পাশ হয়েছে। যতক্ষণ না তা আইনে বদল হচ্ছে, ততক্ষণ সিএবি নিয়ে চিন্তিত রয়েছি। আগে আইন হোক, তার পর আমরা বিষয়টি ভাবব। কিন্তু এনআরসি আমরা চাই না।’’ বিলটি অবশ্য পাশ হয়ে আইনে পরিণত হয়েছে। মতুয়াদের একাংশের কথায়, আসলে হাতে কিছুটা সময় চাইছেন কাশীশ্বর। তার মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে
হবে তাঁদের।

অন্য বিষয়গুলি:

CAB NRC Rajbangshi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE