(বাঁ দিক থেকে) দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা এবং কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে ধসের কবলে পাহাড়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এখনও সিকিম থেকে কালিম্পং যোগাযোগের প্রধান এবং একমাত্র পথ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ। তিস্তা তার গতিপথ থেকে রূপ অনেকটাই পরিবর্তন করছে। যার প্রভাব পড়ছে জাতীয় সড়কের উপর। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা।
জাতীয় সড়ক দেখাশোনার দায়িত্ব এ বার রাজ্য সরকারের হাত থেকে চলে যেতে বসেছে। এ বার থেকে সেই দায়িত্ব পালন করবে কেন্দ্রীয় সংস্থা। আলোচনা থেকে এমনটাই দাবি করলেন বিজেপি সাংসদ রাজু। সম্প্রতি ওই একই দাবি জানিয়েছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমসিংহ তামাং। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নিতিনের সঙ্গে দেখা করে বাংলার অধীনে থাকা ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক দেখাশোনা, মেরামত এবং সংস্কারের দায়িত্ব যাতে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দেওয়া হয়, সেই দাবি জানিয়ে এসেছিলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী। এ বার একই দাবি তুললেন দার্জিলিঙের সাংসদও। শুধু তাই নয়, ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ঠিকঠাক দেখাশোনা করছে না বাংলার সরকার এবং ওই সড়কের মেরামত ও সংস্কার নিয়ে তারা উদাসীন বলেও অভিযোগ করেছেন সাংসদ। মঙ্গলবার রাজু জানিয়েছেন, রাজ্যের পূর্ত দফতরের থেকে সড়ক দেখাশোনার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
দার্জিলিং জেলার করোনেশন সেতু বা বাঘপুল থেকে সিকিমের গ্যাংটক পর্যন্ত যোগাযোগের ‘লাইফলাইন’ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ১০৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তার ৮৭ কিলোমিটার রয়েছে সিকিমের অধীনে। বাকি ৫৭ কিলোমিটার বাংলার। ১৯৬৮ সাল থেকে ওই জাতীয় সড়ক মেরামত ও সংস্কারের কাজ করত সিপিডব্লিউডি। ১৯৮০ সাল থেকে রাস্তার দেখাশোনার ভার বর্তায় বর্ডার রোড অর্গানাইজ়েশনের (বিআরও) উপর। তারও প্রায় ১০ বছর পর রাজ্যের পূর্ত দফতরের কাছে ওই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণের ভার হস্তান্তর করেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। মেরামত ও সংস্কারের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিলেও প্রকল্পের কাজ করে বাংলার পূর্ত দফতর। ২০১৬ সাল থেকে পূর্ত দফতরকে বিআরও বাংলার অধীনে থাকা ৫৭ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক মেরামত ও সংস্কারের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু সিকিমের অংশের রাস্তার দেখভালের দায়িত্ব নিজেদের হাতেই রাখে বিআরও।
এই জাতীয় সড়কের উপর নির্ভরশীল পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসা। শিলিগুড়ি থেকে সিকিম পর্যন্ত প্রচুর স্থানীয় মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে তাদের রুটিরুজি নিয়ে। ‘সেভ এন এইচ টেন’ নিয়ে বহু দিন ধরে প্রচার করছেন তাঁরা। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট স্যানাল বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে পর্যটন সংস্থা ক্ষতির মুখে। গত মাসেও আমরা যে ব্যবসার কথা ভেবেছি, তা ক্ষতির মুখে। উত্তর সিকিমের প্রধান দুটো পর্যটনস্থলের মধ্যে লাচেন প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ। আর লাচুং গত ডিসেম্বরে খুললেও আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর আগেও একাধিক বার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। কিন্তু এ বার বড় প্রশ্ন, এনএইচ ১০ থাকবে কি থাকবে না। আমরা অনুরোধ করছি, কেন্দ্রীয় সরকার এতে হস্তক্ষেপ করুক। সিকিম রাজ্য সরকার এবং আমাদের রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে জিয়োলজিকাল সার্ভে করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক।’’
দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বলেন, ‘‘১০ নম্বর জাতীয় সড়ক খালি সিকিম এবং বাংলার লাইফলাইন নয়। তার সঙ্গে জড়িত রয়েছে দেশের নিরাপত্তাও। এ ছাড়া গোটা উত্তরবঙ্গের পর্যটন, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ওই সড়কের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু, বাংলার সরকারের উদাসীনতা এবং গাফিলতির কারণে সড়কের আজ বেহাল দশা। সময় মতো মেরামত এবং সংস্কার না-হওয়ার কারণে এখন ওই সড়ককে তিস্তা গ্রাস করছে। আর এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা রাজ্য সরকারের হাতের বাইরে। তাই আমি নিতিনজিকে আবেদন করেছি, যাতে গ্রিফ, এনএইচআইডিসিএল (ন্যাশনাল হাইওয়েজ় অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট) বা এনএইচআই (ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া)-র মতো সংস্থা ওই সড়কের দায়িত্ব নেয়। পুরো বিষয়টি শুনে মন্ত্রী তৎক্ষণাৎ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মন্ত্রকের আধিকারিকদের শুরু করার নির্দেশ দেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy